২২ বছর পর স্মৃতিতে ফেরা
‘যেনো অদ্ভূত মোহ জাগানিয়া একটি দিন, যেনো নিজের শিকড়ের কাছেই ফিরে যাওয়া আর ভালোবাসায় ভিজে ভিজে স্মৃতির জাবর কাটা।’
এভাবেই কেটে গেলো, পুরো একটি দিন! ঠিক ২২ বছর পর আরো একবার যেনো স্মৃতি ঝাপি খুলে বসলো রাঙামাটির বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন ব্যাচ-৯৪ ।
শুধু নিজেরাই একা নয়, সঙ্গে পুরো পরিবার নিয়ে বর্ণিল নানা আয়োজনে ২২ বছর পর আবার রঙিন করে তুললো পেছনে ফেলে আসা সময়, স্মৃতি আর গল্পগুলো।
‘আজো বুকের ভেতর উচ্ছল, আমাদের সোনালী কৈশর’-এই স্লোগানে আয়োজন করা ১৮ মার্চের অনুষ্ঠানের ভেন্যুও ছিলো ব্যতিক্রমি একটি স্থান, রাঙামাটি শহরের পলওয়েল ন্যাচার পার্কের লাভ পয়েন্ট। কী ছিলো না দুইদিনের আয়োজনে।
গত ২২ বছরে হারানো বন্ধু হাসান এবং আরেক বন্ধুপত্নী মুন্নীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের আয়োজন। এরপর সম্মিলিত কণ্ঠে বন্ধুরা সবাই মিলে নেচে গেয়ে প্রায় সাত মিনিটের থিম সং। এরপর একে একে পরিচিত পর্ব, স্মৃতিচারণ আর সন্তানদের পরিবেশনা।
দুপুরের খাবারের পর প্রতিটি সন্তান ও পরিবারের জন্য উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়। বিকেলে পাহাড়ের সাম্প্রতিক সময়ের ক্রেজ ব্যান্ডদল ‘সাইক্লোন’ এর মুগ্ধ পরিবেশনা আর মুহুর্মুহু আতশবাজির সঙ্গে বন্ধুদের উত্তাল আর ছন্দহীন নৃত্য যেনো ফিরিয়ে আনে পুরো শৈশব আর কৈশরকেই। গানের ফাঁকেই চলে র্যাফেল ড্র, এতে প্রথম পুরস্কার জিতে নেয় রানা।
সকাল ৯টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠান চলে রাত ১২টা অবধি। মধ্যরাতে যেনো ছেলেবেলায় ফিরে যায় বন্ধুরা সবাই। লাভ পয়েন্টের তাবুতে রাত কাটাতে কাটাতে যেনো পুরোনো প্রেম, প্রেমিকা, বন্ধু, স্যারদের গল্প ছড়িয়ে পরে সবার স্মৃতি থেকে সবুজ লাভপয়েন্ট আর নীল হ্রদের জলে। বন্ধুরা তখনো এক একজন আবেগে মুখর।
অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা ঠিক ২২ বছর পর, কোনো কোনো বন্ধুতো শুধু অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই দেশের বাইরে থেকে হাজির। কোনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে একই শহরে থেকেও না দেখার বেদনা কিংবা অভিমান যেনো মুহূর্তেই মিলিয়ে দিলো এক পুনর্মিলনী। মজার ব্যাপার হলো, কোনো বন্ধুই আনুষ্ঠানিকভাবে অন্য আরেক বন্ধুর কাছে একবারও জানতে চাইতে দেখা গেলো না, কে কী করে! যেনো স্কুল আর কলেজ জীবনের স্মৃতির আঁকড়ে থাকতে চাইছে এক একজন। কী এক অদ্ভূত মোহ জাগানিয়া টান সবার মাঝেই।
মধ্যরাতে অনুষ্ঠান শেষ করে পরদিন সকালে সবাই মোটর সাইকেল নিয়ে হাজির প্রিয় কলেজ ক্যাম্পাসে। পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে গিয়ে ‘সবুজের মিছিল’টি কলেজের পুরোনো স্যারদের খুঁজে বের করে ঘুরে বেড়ায় পুরো কলেজ চত্বর। এ সময় কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানায় ভাইয়াদের। কলেজের সেই বিখ্যাত গোল চত্বরে ডেমো বক্তৃতাপর্বে অংশ নেন পুরোনো সেই ছাত্রনেতারা! এরপর ফটোসেশন শেষে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরা পথ ধরতে আবারো যখন মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন স্টার্ট করা শুরু হয়, সবাই ভীষণ আবেগে থরথর তখন। যেনো কোনোদিন আর ফেরা হবে না এই ক্যাম্পাসে! অথচ শেষে নিজেদেরই সিদ্ধান্ত, এখন থেকে প্রতিবছরই নিয়মিতভাবেই আয়োজিত হবে এই মিলনমেলাটি।
শনিবার বিকেল থেকে বাইরে থেকে আসা বন্ধুরা যখন একে একে বিদায় নিচ্ছে, তখন সবার চোখেই জল, দুইদিনের উচ্ছ্বাস যেনো মুহূর্তেই বিলীন। ভালোবাসা আর বন্ধুতা বুঝি এমনিই !