‘অস্ত্রধারী-চাঁদাবাজদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না’
‘আঞ্চলিক দলগুলো রাঙামাটিসহ পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। যার হার দিনদিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে, কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও তাদের চাঁদার বাইরে নেই, তাদের প্রয়োজন শুধু চাঁদা। আর এসব অস্ত্রধারী-চাঁদাবাজদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না।’-সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সচেতন পার্বত্য জনগণ ব্যানারে আয়োজিত আগামী ২৪ মার্চের সমাবেশকে ঘিরে আয়োজিত পথসভায় রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এ কথা বলেছেন। সোমবার সন্ধ্যার পর শহরের তবলছড়ি এবং রিজার্ভবাজারে পৃথক দুটি পথসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।
পথসভায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই চাঁদাবাজির কারণে অনেক ঠিকাদার তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। আর এই অবৈধ অস্ত্রধারী-চাঁদাবাজদের কারণে সরকারের উন্নয়নকাজ ব্যাহত হচ্ছে। রাঙামাটির লংগদু, জুরাছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়িসহ অনেক উপজেলায় তেমন কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। তাদের চাঁদার কারণে ঠিকাদাররা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে পারছে না। আর সাধারণ মানুষ উন্নয়নের জন্য ভোট দেন, কিন্তু এসব অবৈধ অস্ত্রধারী চাঁদাবাজদের কারণে সকল উন্নয়নকাজ দৃশ্যমান হয় না। তাই এসব অবৈধ অস্ত্রধারীদের ধরতে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে চিরুণি অভিযান চালানোর জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’
দীপংকর তালুকদার চাঁদাবাজবিরোধী এই সমাবেশকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই দাবিকে গণদাবিতে রূপান্তর করার চেষ্টা করছি এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে আন্দোলন করতেই আগামী ২৪ মার্চ এক ঘণ্টা কর্মবিরতি দিয়ে সচেতন পার্বত্য নাগরিক ব্যানারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানাই।’
দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, ‘এই আন্দোলন কোনো জাতি, ধর্মের বা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়। আমরা মনে করি, যারা অবৈধ অস্ত্রধারী, যারা চাঁদাবাজ, তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। তারা রাষ্ট্রের শত্রু, মানবতার শত্রু, জনগণের শত্রু। আগে মানুষ অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে আস্তে আস্তে, ভয়ে ভয়ে কথা বলত এবং আগামী ২৪ মার্চ সমাবেশকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্রধারীদের ধরতে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, খুন, গুম ও হত্যার বিরুদ্ধে পার্বত্য জনগণ জোরালোভাবে কথা বলবে।’
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রধারীদের ধরতে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, খুন, গুম ও হত্যার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই খাগড়ছড়িতে অর্ধ দিবস হরতাল পালন করেছে সেখানকার মানুষ। প্রয়োজন হলে আমরাও ২৪ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি হরতাল পালন করব। তার পরও দাবি আদায়ে পিছপা হওয়া যাবে না। যদি কোনো সাধারণ নাগরিক মনে করেন, সমাবেশে যোগদান করলে জীবনের ঝুঁকি আছে তাহলে আপনারা এক ঘণ্টা কর্মবিরতি করে আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে পারেন।’
পথসভায় পার্বত্য অঞ্চলে নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রধারীদের ধরতে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে চিরুনি অভিযান চালানোর জন্য জোর দাবি জানান তিনি।
দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, ‘পাহাড়ের মানুষ অবৈধ অস্ত্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। চুক্তির মধ্যে পার্বত্যাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়টিও উল্লেখ আছে। পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টিও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই পাহাড়ে চাঁদাবাজি বন্ধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হলেই পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব। চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনের নামে যারা পাহাড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া জনসংহতি সমিতির অসহযোগ আন্দোলনের নামে বিভিন্ন কর্মসূচির জবাবে এবার সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ।’
এ সময় সচেতন পার্বত্য জনগণ ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান, রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বর, রাঙামাটি পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. হাবিবুর রহমান, রাঙামাটি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি মো. সোলাইমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহম্মেদ, রাঙামাটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জামালউদ্দীন, বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জমির উদ্দিন, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সামশুল হক, তবলছড়ি ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক, রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অপু সিং লেপচাসহ আরো বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।