রাঙামাটির রাজবন বিহারে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
বান্দরবানের স্বর্ণমন্দিরের পর এবার পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ হলো রাঙামাটির ঐতিহ্যবাহী ও দৃষ্টিনন্দন রাজবন বিহার।
ধর্মীয় আচার পালন ছাড়া যে কোনো কারণে রাজবন বিহারে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে রাঙামাটি রাজবন বিহার ভিক্ষুসংঘ। গতকাল শনিবার থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য পর্যটকদের ভ্রমণে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিহারে একটি নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘রাজবন বিহার বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেখানে পূজা-পার্বণাদি ও ধর্মীয় নীতিমালা প্রতিপালনের সঙ্গে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা হয়। এই পুণ্যতীর্থে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শ্রেণির বৌদ্ধ পুণ্যার্থীর আগমন ঘটে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ইদানীং পুণ্যার্থী ছাড়াও বিপুল পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আগমনের ফলে তাঁদের পক্ষে বিহারের নীতিমালা, আচরণ মান্য করা হচ্ছে না। অন্যদিকে পর্যটনকেন্দ্র সদৃশ তুলনা করে তাদের নিজস্ব নানা রকম আপত্তিকর ভঙ্গিমায় ছবি তোলা, ভিডিও করা, ঘোরাঘুরি, চিৎকার, উচ্চশব্দ-মহাশব্দ, হৈচৈ করার মাধ্যমে বিহারের সুস্থিতিশীল ও শান্ত পরিবেশকে নষ্ট করা হচ্ছে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটন ভ্রমণকারীদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে, পূজারি, পুণ্যার্থী, ধর্মীয় উপাসক-উপাসিকা ও বিহারের কাজে নিয়োজিত কর্মচারী ব্যতীত দর্শনার্থী, পর্যটক বহনকারীদের রাজবন বিহারে আগমন ও ভ্রমণ করা অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে।’
এ বিষয়ে রাঙামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকার পরিষদের সহসভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, এটা সাময়িক নিষেধাজ্ঞা। রাজবন বিহারের প্রতিদিন প্রচুর পর্যটকের আনাগোনার কারণে ভান্তেদের (বৌদ্ধভিক্ষু) স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাই সাময়িকভাবে ভিক্ষুসংঘের পক্ষ থেকে রাজবন বিহারে দর্শনার্থীদের ভ্রমণ নিষেধ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের আরেক পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণমন্দিরেও পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এদিকে রাজবন বিহারে পর্যটকদের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাঙামাটির পর্যটন শিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বিহারের নির্দিষ্ট একটি এলাকা পর্যটকদের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য বিহার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তাঁরা।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা আসলাম ও ফারজানা দম্পতি গতকাল বিকেলে রাজবন পরিদর্শনে গেলে নোটিশ দেখে হতাশা প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রাজবন বিহারের নির্মাণশৈলী ও এর প্রকৃতিগত সৌন্দর্যের জন্য দেশ-বিদেশে খুবই পরিচিত। কিন্তু হঠাৎ করে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা হতাশ। কর্তৃপক্ষ একটি নির্দিষ্ট সময় কিংবা একটি নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করে দিলে দর্শনার্থীরা অন্তত এর সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারতেন।
রাঙামাটি হোটেল ব্যবসায়ীর সমিতির যুগ্ম সম্পাদক নেছার আহম্মেদ বলেন, এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশার বিষয়। আমি রাজবন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাব, তাঁরা যেন নির্দিষ্ট একটি সময় বেঁধে দেন, তাহলে সেই সময়ের মধ্যে দর্শনার্থীরা ভ্রমণ করতে পারবেন।
রাজবন বিহারের ভিক্ষুসংঘের মহামিত্র ভান্তে বলেন, নিষেধাজ্ঞা অনির্দিষ্টকালের জন্য করা হলেও এটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে রেজিস্ট্রি খাতায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছি। যেহেতু এটি কোনো পর্যটন কেন্দ্র নয়, ধর্মীয় তীর্থ ভূমি। তাই ধর্মীয় পরিবেশ বজায় রেখে কাজ করা হবে।
১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর নির্মাণশৈলী ও বনভন্তের বিহার হিসেবে দর্শনার্থীদের অন্যতম একটি প্রিয় স্থান রাঙামাটি রাজবন বিহার। প্রতিদিন এই স্থানে প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসেন। এ ছাড়া প্রতিবছর কঠিন চীবর দানোৎসবে দেশ, বিদেশ থেকে কয়েক লাখ পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটে এখানে।