‘অপমানে’ স্কুলছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’
আশ্বাস দিয়েও বিয়ে না করে উল্টো কুৎসা রটানোয় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় অভিমান-অপমানে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভুমখাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ আজ শুক্রবার সকালে স্কুলছাত্রী তানজুম আক্তারের (১৭) লাশ উদ্ধার করে। সে গ্রামের আবদুল্লাহ খালাসির মেয়ে ও চাকধ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কবিরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় স্কুলছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, তানজুম আক্তার যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত, তখন একই গ্রামের মৃত কুদ্দুস হাওলাদারের ছেলে রুবেল হাওলাদার তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। মেয়েটির পরিবার এতে বাধা দিলেও রুবেলের পরিবার গ্রামে প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো ফল হয়নি। একপর্যায়ে রুবেল তানজুমকে বিয়ের আশ্বাস দিলে মেয়েটির পরিবার তা মেনে নেয়। এরপর দুজনের মধ্যে এক ধরনের সম্পর্কও তৈরি হয়।
রুবেলের পরিবারের অনেকেই ইতালি থাকায় এরই মধ্যে তিনিও সেখানে চলে যান। রুবেল বছরের ছয় মাস দেশে ও ছয় মাস ইতালিতে থাকেন। সম্প্রতি রুবেল দেশে এসে তানজুমকে জানান, তাঁর পরিবার এ বিয়েতে রাজি নয়। এ কারণে তিনি এ বিয়ে করতে পারবেন না। তানজুমের পরিবার রুবেলকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এর পর থেকেই তানজুমের বিরুদ্ধে গ্রামে কুৎসা রটানো শুরু হয় বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
তানজুমের মা শাহানাজ বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রুবেল অনেক দিন আমার মেয়েকে ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। মেয়ের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাঁর সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলাম। আমরা গরিব হওয়ায় পরে এ বিয়েতে তাঁর পরিবার রাজি হয়নি। রুবেল বিয়ে ভেঙে দেওয়ার জন্য আমার মেয়ের নামে গ্রামে কুৎসা রটাতে থাকে। এ কারণেই সে ক্ষোভে-দুঃখে ও অপমানে আত্মহত্যা করেছে।’
শাহানাজ বেগম আরো বলেন, ‘সাবেক ইউপি সদস্য আতাহার হোসেন বেপারি ও বর্তমান ইউপি সদস্য জানে আলম চৌকিদার আপসরফার প্রস্তাব দিয়ে বলেছে, মামলা করতে অনেক টাকা লাগে। মামলা করে তো মেয়েকে ফেরত পাওয়া যাবে না। আমরা গরিব হওয়ায় মামলা করতে সাহস পাচ্ছি না। আমি রুবেল ও তার পরিবারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
তবে জানে আলম চৌকিদার ও আতাহার হোসেন বেপারি দুজনই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তাঁরা কাউকে মামলা করতে বাধা দেননি। এটা মেয়েটির পরিবারের সিদ্ধান্ত। বরং ঘটনার পর থেকে মেয়েটির পরিবারের সাথে থেকে সহায়তা করার চেষ্টা করছেন বলে জানান তাঁরা।
ঘটনার পর রুবেল ও তাঁর পরিবার এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাঁদের বক্তব্য সংগ্রহ করা যায়নি।