রাঙামাটিতে মোটরসাইকেল চুরির হিড়িক
রাঙামাটি শহরে একের পর এক মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে শহরবাসী। কয়েক মাস ধরে একটি চিহ্নিত চক্র শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি করছে। অথচ এখন পর্যন্ত একজনকেও গ্রেপ্তার কিংবা কোনো ঘটনারই সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে শহরের মানিকছড়ি, রিজার্ভ বাজার, বনরূপা, কাঁঠালতলি, তবলছড়ি এলাকা থেকে অন্তত ১৫টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। এসব মোটরসাইকেলের একটিও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। শুধু তাই নয়, এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই চিহ্নিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ রশিদ ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এটা ঠিক যে, এই মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এটা নিয়ে আমরা নিজেরাও বিব্রত। আমরা জোর চেষ্টা করছি এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য।’
ওসি আরো বলেন, ‘সম্প্রতি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় এরশাদ নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। এরশাদ মোটরসাইকেল চুরি সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আমরা এসব যাচাই-বাছাই করছি, এদের কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না।’
গত বছরের ২ আগস্ট শহরের মানিকছড়ি থেকে চুরি হয় জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার ও তাঁর ছোট ভাই আলমগীর তালুকদারের দুটি মোটরসাইকেল। এই চুরির এক সপ্তাহ পরই কলেজ গেটের সজলের গ্যারেজ থেকে দুটি চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়। কিন্তু ততক্ষণে গাড়ি দুটির চেচিস নম্বরও পাল্টে ফেলা হয় কৌশলে।
গত ৪ মে শহরের রিজার্ভবাজারের ১ নম্বর পাথরঘাটার পুননজয় ভিলা থেকে চুরি হয় দুটি মোটরসাইকেল। দীপায়ন খীসা ও রিকো খীসা এই দুটি মোটর সাইকেলের মালিক। এই ব্যাপারে তারা থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
গত ১৩ মে শহরের আলম ডক ইয়ার্ডের ভেতরের আবাসিক এলাকা থেকে চুরি যায় আরো দুটি মোটরসাইকেল। এর একটি ঐশি কালেকশনের সালাউদ্দিন জুয়েলের এবং আরেকটি হাবিবুর রহমান চৌধুরী সেলিমের। এই গাড়ি দুটি ছিল পালসার মডেলের। এই দুজনই জিডি করেন।
এর মাত্র কদিন আগেই একই এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা জমীর উদ্দিনের বাসা থেকে তাঁর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা মেজবাহ উদ্দিনের একটি এবং যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহবুব এলাহীর আরেকটি মোটরসাইকেল চুরি যায়। এই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবেই দুই ছাত্রলীগকর্মী কলিম ও এরশাদকে আটক করে পুলিশ। পরে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের কাছ থেকে তাদের ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগ নেতা সুজন ও বাপ্পা। পরে দুই আসামিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলেও পরদিন সকালে কলিমকে ছেড়ে দিলেও এরশাদকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এই এরশাদ মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে মনে করছে পুলিশ।
একের পর এক মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় হতাশ, ক্ষুব্ধ শহরের মানুষ।
মোটরসাইকেল চুরি যাওয়াদের একজন জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার বলেন, ‘এইভাবে একের পর এক মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমার মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে, আর যেন কারো চুরি না হয়, সেই দাবি করছি।’
ঐশি টেলিকমের স্বত্বাধিকারি সালাউদ্দিন জুয়েল বলেন, মানুষ মোটরসাইকেল কিনে প্রয়োজন এবং সখের কারণে। এইভাবে যদি গাড়ি চুরি যায়, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
কোতোয়ালি থানার ওসি মুহম্মদ রশিদ বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এটা বন্ধ করব। বিষয়টি নিয়ে আমরা বসেছি। যেকোনো ভাবেই হোক, এর সঙ্গে জড়িতদের আমরা খুঁজে বের করবই।’