অভিজিৎই হয়ে গেলেন ওয়াশিকুর
মাত্র একদিন আগেই নিজের ফেসবুক প্রোফাইলের কাভার ফটো বদলে ফেলেছিলেন তিনি। নানা রঙে সেখানে লেখা ছিল, ‘আই অ্যাম অভিজিৎ।’ বাংলায় যে বাক্যটির অর্থ দাঁড়ায়, ‘আমি অভিজিৎ।’ দিন পেরোতেই সত্যি তিনি হয়ে গেলেন অভিজিৎ। তাঁর মতোই দুর্বৃত্তের চাপাতির আঘাতে প্রাণ হারালেন ওয়াশিকুর রহমান বাবু।
নিহত লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের খুনের ঘটনায় গত ২৮ মার্চ শনিবার রাতে কাভার ফটো বদলেছিলেন বাবু। সেখানে ‘আমি অভিজিৎ’ লিখে পরের লাইনে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে ‘শব্দকে হত্যা করা যায় না’ (#WordsCannotBeKilled)।
এই কাভার ফটো পরিবর্তনের ঠিক একদিন পর আজ সোমবার সকালে চাপাতির কোপে প্রাণ হারাতে হয়েছে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার বেগুনবাড়ীতে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ওয়াশিকুরকে হত্যা করে তিন দুর্বৃত্ত। এদের মধ্যে জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম নামের দুজনকে ধরে ফেলেন এলাকাবাসী। এর পর তাদের তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, ধর্ম ও নবীকে নিয়ে কটূক্তি করায় ওয়াশিকুরকে খুন করা হয়েছে।
জনপ্রিয় ব্লগ সামহোয়ারইন ব্লগ ডট নেট-এ ‘কুচ্ছিত হাঁসের ছানা’ নামে ব্লগ লিখতেন ওয়াশিকুর। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি এই ব্লগে লেখালেখি শুরু করেন তিনি। এর পর ২০১০ সালে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানেও সক্রিয় হতে শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে তাঁর লেখা বেশ কিছু স্ট্যাটাসে তীব্র সমালোচনা দেখা গেছে। বিশেষ করে ধর্ম-সংক্রান্ত পোস্টগুলোর জন্য আক্রমণাত্মক কথাও শুনতে হয়েছে তাঁকে। এসব নিয়ে বেশ বাগবিতণ্ডাও চলেছে সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমটিতে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার ওপর চাপাতি দিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে নিহত হন অভিজিৎ এবং গুরুতর আহত হন তাঁর স্ত্রী বন্যা। ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন লেখালেখির দায়ে অভিজিৎকে অনেক আগে থেকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
এ ঘটনার পর ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন রকম প্রতিবাদী স্ট্যাটাস দেন ওয়াশিকুর রহমান। গত ১১ মার্চ ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল ছবি বদলে সেখানেও ছবি দেন ‘আমি অভিজিৎ’ লেখা পোস্টার।