রাঙামাটিতে কারচুপি হলে ছাড় নয়
বান্দরবান-খাগড়াছড়ির মতো রাঙামাটিতে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনেও যদি কারচুপি করা হয় তবে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।
সন্তু লারমা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য যথেষ্ট কারচুপি হয়েছে। ফলে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। আগামী ৪ জুন অনুষ্ঠেয় শেষ ধাপের নির্বাচনে যদি রাঙামাটির ইউনিয়নগুলোতে একই কায়দায় সরকারি দলের প্রার্থীদের জেতানো হয়, তবে সেই প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করা হবে।
‘শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’ স্লোগানকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র জনসমাবেশে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি এবং আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) এসব কথা বলেন। শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটি জিমনেশিয়াম মাঠে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বাচ্চু চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, সদস্য উদয়ন ত্রিপুরা, কেয়ম মারমা, শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মহিউদ্দিন মহিন, কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি শিমুল কান্তি বৈঞ্চব, হিল হিউমেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিমিকা চাকমা প্রমুখ।
সন্ত লারমা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপনিবেশ কায়দায় শাসন ও শোষণ করার চেষ্টা চলছে। পার্বত্যাঞ্চলে এখনো সেনাশাসন চলছে। সরকার বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের সেনাবাহিনীকে সরাসরি কোনো বিষয়ে ভূমিকা রাখতে না দিলেও পার্বত্যাঞ্চলে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। তারা সরাসরি কথা বলছে। সরকার শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন টালবাহানা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আগে যেমনটি ছিল বর্তমানে তেমনটি নেই।
৪ জুন রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনকে নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে বলে দাবি করে সন্তু লারমা বলেন, ‘রাঙামাটিতে সুষ্ঠু নির্বাচনব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ বিভিন্ন টালবাহানা করে একটি নীলনকশা তৈরি করছে। সিইসি এই ইউপি নির্বাচনে কোনো স্থানে যায়নি, কিন্তু তিনি রাঙামাটির আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে কথা বলার জন্য আসছে। এটা কি আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করার জন্য না আওয়ামী লীগকে কেমনভাবে জয় করাবে সেটা নিশ্চিত করার জন্য আসছে আমরা সেটা ভাবছি। আমরা আশঙ্কায় আছি আদৌ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না।’
জুম জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে জনসংহতি সমিতির সভাপতি বলেন, ঢাকার বুকে পার্বত্য এলাকার মানুষের জন্য যে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে সেটি উদ্বোধনকালে মানুষ মনে করেছে এইবার চুক্তি বাস্তবায়নের দুয়ার খুলেছে কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন। ঢাকায় গেলে ভিন্ন ধরনের আচরণ করে মনে হয় তারা আমাদের জন্য সবকিছু করে দেবে কিন্তু বাস্তবে তার কোনো মিল নেই। জেলা পরিষদে তারা নিজেদের লোক দিয়ে জুম্ম জনগণকে প্রতারণা করছে। এটি সৃষ্টি হয়েছিল পার্বত্য অঞ্চলের লোকদের কল্যাণের জন্য কিন্তু বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাদের কল্যাণের জন্য।
পার্বত্য অঞ্চলকে ইসলামীবাদ করার পাঁয়তারা চলছে বলে জানিয়ে সন্তু লারমা আরো বলেন, পার্বত্য অঞ্চলকে ইসলামীবাদ করার জন্য একটি গোষ্ঠী কাজ করছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। তা রুখতে জুম্ম জনগণ কাজ করবে বলেও তিনি জানান।
সমাবেশ শেষে জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে এক বর্ণাঢ্য মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রাজবাড়ি কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়ে শেষ হয়।