সেলিম ওসমানের সংসদ সদস্যপদ বাতিলের দাবি মাহবুবের
নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে জাতীয় সংসদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান। আজ রোববার ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে দেখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন পার্লামেন্ট মেম্বারের কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ কখনো আমরা আশা করি না। তিনি একজন পার্লামেন্টের মেম্বার হয়ে কীভাবে এই কাজ করলেন- এটা আমার কাছে এক বিরাট বিস্ময়। আমরা পার্লামেন্ট থেকে তাঁর বহিষ্কার চাই এবং এই শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত- তাঁর যথাযথ সম্মান ও মর্যাদার পুনঃস্থাপন চাই।’
এর আগে ঢাকা মেডিকেলে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘ওই শিক্ষককে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এ জন্য সবাই আমরা লজ্জিত। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত লজ্জিত হয়েছি, আমরা সবাই লজ্জিত হয়েছি। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমি মনে করি এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।’
গত ১৩ মে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুলের সামনের একটি মসজিদ থেকে হঠাৎ করেই মাইকে ঘোষণা করা হয়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন এবং সেখান থেকে এলাকাবাসীকে স্কুলমাঠে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দলে দলে স্কুলে ঢোকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তারা স্কুলের দরজা ভেঙে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করে এবং তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। এরপর বিকেলে সংসদ সদস্য উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করার শাস্তি দেন।
কান ধরে ওঠ-বসের পর সমবেত জনতার কাছে করজোড়ে মাফ চাইতেও বাধ্য করা হয় ওই প্রধান শিক্ষককে। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হেফাজতে স্কুল থেকে বের করা হয়।
গত ১৬ মে শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি। সর্বশেষ গতকাল তাঁকে স্বপদে বহাল করে স্কুলের কমিটি বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই ঘটনার পর শিক্ষক ও আইনজীবীসহ সারাদেশের মানুষ ওই ঘটনার জন্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন; সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও।
সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ যাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে একটি একটি রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট।
সেলিম ওসমান অবশ্য বলেছেন, “ফাঁসি হলেও ওই ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন না। সংবাদ সম্মেলন করে এই সংসদ সদস্য দাবি করেছেন, শ্যামলকে তিনি ‘কান ধরাননি’, শিক্ষক নিজেই ধরেছেন।”