পঞ্চগড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জিঙ্কসমৃদ্ধ ধান
পঞ্চগড় জেলায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জিঙ্কসমৃদ্ধ ব্রি ধান-৬৪। ভালো ফলন এবং জিঙ্কের ঘাটতি মোকাবিলায় কৃষকরা এ ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
জিঙ্ক এমন একটি পুষ্টি উপাদান যার অভাবে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ রোগ হয়। তা ছাড়া বাংলাদেশে ৪০ শতাংশের বেশি শিশু জিঙ্কের অভাবে খাটো হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে শৈশব ও বয়োসন্ধিকালে স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক জিঙ্কের ঘাটতি ৪-১২ মিলিগ্রাম। জিঙ্কসমৃদ্ধ ব্রি ধান-৬৪-তে প্রতি কেজি চালে ২৪ মিলিগ্রাম জিঙ্ক রয়েছে। এই চালের ভাত খেলে ৬০-৮০ শতাশ জিঙ্কের ঘাটতি কমে যায়। বাংলাদেশ আর্ন্তজাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৩ সাল থেকে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় এই জাতের ধান চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে।
গত বছর আমন মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় প্রাথমিকভাবে ১২৫ জন কৃষকের মাধ্যমে ১৭ হেক্টর জমিতে এই ধানের চাষ করা হয়। এরই ধারাহিকতায় চলতি বছর বোরো মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় ১০৫ জন কৃষকের মধ্যে জিঙ্কসমৃদ্ধ ব্রি ধান-৬৪ ও এক হাজার জন কৃষককে তিন হাজার কেজি ব্রি ধান-৬২ বীজ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হয়। এই বীজ দিয়ে ১৪৭ হেক্টর জমিতে এই ধান চাষ করা হয়েছে। এই জাতের ধান চাষে প্রতি বিঘায় ২২-২৩ মণ ফলন পাওয়া যায়। যা অন্যান্য জাতের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি।
জেলার বোদা উপজেলার কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের উৎকুড়া গ্রামে কৃষক তরেন্দ্র নাথ জানান, এবার তিনি প্রাথমিকভাবে এক বিঘা জমিতে জিঙ্ক সমৃদ্ধ ব্রি ধান-৬৪ চাষ করেছেন। এই জমি থেকে তিনি ২৩ মণ ধান পেয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী মৌসূমের জন্য বীজ রাখার পর বাকি ধান চাল করে নিজেরাই খাবেন। এতে পরিবারের সবার জিঙ্কের অভাব দূর হবে।
কৃষক তরেন্দ্র নাথের জমিতে চাষ করা ব্রি ধান-৬৪ কাটা উপলক্ষ্যে বুধবার এক মাঠ দিবসের আয়োজন করে রংপুর দিনাজপুর গ্রামীণ সেবা (আরডিআরএস)। উৎকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত ওই মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল।
আরডিআরএসে পঞ্চগড়ের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (মাঠ সমন্বয়) হাসিনা পারভিনের সভাপতিত্বে মাঠ দিবসে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোদা উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুন অর-রশিদ, কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ফজলার রহমান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিরুল ইসলাম, হারভেস্ট প্লাস প্রোগ্রামের অ্যাগ্রিকালচার রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার রুহুল আমিন মণ্ডল।
এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আরডিআরএস বাংলাদেশ রংপুরের সহকারী সমন্বয়কারী (কৃষি) সৈয়দা নূহেরা বেগম, কৃষি কর্মকর্তা নুরুজ্জামান রনি ও ফিরোজ বুলবুল, কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন সমাজকল্যাণ ফেডারেশনের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান শ্যামল। এর আগে প্রধান অতিথিসহ বিশেষ অতিথিরা আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটা উদ্বোধন করেন।
অমল কৃঞ্চ মন্ডল বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু আমাদের বর্তমানে বড় সমস্যা পুষ্টির অভাব। তার মধ্যে একটি হল জিঙ্কের অভাব। বাংলাদেশের মানুষকে বিশেষ করে পঞ্চগড় জেলার মানুষকে বেশি করে জিঙ্ক সমৃদ্ধ ব্রি ধান-৬৪-এর চালের ভাত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরো বলেন, এই ধানের বীজ সংরক্ষণ করে পরবর্তী সময়ে আরো বেশি করে জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধান চাষ করতে হবে।