সাত খুনে সংশ্লিষ্টতা স্বীকার আ.লীগ নেতার
নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল বাশার। আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বেগম চাঁদনী রূপমের আদালতে তিনি এ জবানবন্দী দেন। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন এ কথা জানিয়েছেন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত ২৭ মার্চ রূপগঞ্জ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক বাশারকে গ্রেপ্তার করে। বাশার সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জে সড়ক ও জনপথ বিভাগে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ২৮ মার্চ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাশারের সাতদিন হেফাজত মঞ্জুর করেন আদালত। হেফাজতের চারদিন বাকি থাকতেই আজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন বাশার।
আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন জানান, নূর হোসেনের সব অপকর্মের সাথী আবুল বাশার সাত খুনের সাথে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে দোষ স্বীকার করেছেন। এই স্বীকারোক্তির মাধ্যমে তিনি বলেছেন, নূর হোসেনের একটি সেক্টরের অর্থনৈতিক দিকগুলো তিনি দেখতেন।
নূর হোসেনের নির্দেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা আরিফ হোসেনকে বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা নিয়েই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। বাশার ঘটনার দিন কাঁচপুর সেতুর নিচে লাশগুলো গাড়ি থেকে নামিয়ে ট্রলারে ওঠানোর সময় নূর হোসেনের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন।
এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর মাধ্যমে এ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হয়েছে জানিয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী অবিলম্বে নূর হোসেনকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার দাবিও জানান।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ের জামাই বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় দুটি মামলা করেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ১১-এর চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, কমান্ডার এম এম রানাসহ ১৯ র্যাব সদস্যের মধ্যে ১৮ জন সাত খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
সাত খুন মামলার প্রধান অভিযুক্ত আসামি আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এ ঘটনার পর ভারতে পালিয়ে গেলে সেখানকার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বাংলাদেশ সরকার এখনো তাঁকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি।