সুখের স্মৃতিই এখন দুঃসহ বেদনা
ছবিটি এখন শুধুই স্মৃতি। স্বজনদের কাছে দুঃসহ বেদনার চিহ্ন। মা-বাবার সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে গিয়েছিল যশোর পুলিশ লাইন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা (১৫)। ১ ফেব্রুয়ারি সকালে যখন মাইশা এই ছবি তার ফেসবুকে আপলোড করেছিল, তখনো কি মাইশা জানত তার ছবির নিচে লাইক আর তাকে শুভকামনা জানানোর পরিবর্তে ফেসবুক পেজটি তাকে হারানোর বেদনায় ভারী হয়ে যাবে?
মাইশার বাবা নূরুজ্জামান পপলু কি জানতেন, বাবা-মেয়েকে এভাবে একদিনে পুড়ে কয়লা হয়ে যেতে হবে? এত তাড়াতাড়ি ইহলোক ছেড়ে পাড়ি জমাতে হবে পরপারে?
মাইশার মা মাহফুজা বেগম মিতাও জানতেন না, পরিবারের সঙ্গে এটাই হবে তাঁর শেষ ভ্রমণ। আর কখনো প্রিয়তম সঙ্গী, আদরের মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া হবে না তাঁর। বার্ন ইউনিটের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুযন্ত্রণায় পোহাতে হবে।
মাইশার মৃত্যুর পর ছবিটি শেয়ার দিয়ে মাইশার ফুপু তাতে বলেন, ‘আমার জান... আমার মেজদা, আমার মা মাইশা নেই। আমি রাজনীতি বুঝি না, আমি আমার মাইশাকে চাই, আমার মেজদাকে চাই...।’
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় নিহত সাতজনের মধ্যে দুজন বাবা-মেয়ে। বাবা নূরুজ্জামান পপলু (৫০) যশোর শহরের ঘোপ এলাকার পেশায় ঠিকাদার ছিলেন। এ ঘটনায় গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন নূরুজ্জামান পপলুর স্ত্রী মাহফুজা বেগম মিতা।
নিহত পপলুর ছোটভাই যশোর শহর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামরুজ্জামান ডাবলু বলেন, ‘ভাই-ভাবি ও তাদের মেয়ে চার দিন আগে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সোমবার রাতে তাঁরা সেখান থেকে ফিরছিলেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে আমার বড়ভাই পাট গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক আসাদুজ্জামান ও এক ভগ্নিপতি ঢাকা থেকে ভোরে কুমিল্লা রওনা হন। তাঁরা কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে লাশ দুটি শনাক্ত করেন।’
পপলুর ভাই কামরুজ্জামান ডাবলু বলেন, ‘ভাবী মাহফুজা বেগম মিতার হাত, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়ে গেছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।’