সমাজচ্যুত পরিবার নামাজ পড়তে যাওয়ায় বাড়িতে হামলা
নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় সাত মাস ধরে গ্রামের চারটি পরিবারকে একঘরে (সমাজচ্যুত) করে রাখা হয়েছে।
একঘরে ওই পরিবারের লোকজন বাধা উপেক্ষা করে মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে যাওয়ায় সমাজের লোকজন হামলা চালিয়ে মারপিট, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। হামলায় নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে পুলিশ আকরাম হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রানীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ভেবরাগাড়ী গ্রামে ফুটবল খেলার টাকা উত্তোলন নিয়ে আবদুল জলিলের সঙ্গে একই গ্রামের ফজের আলী নামের গ্রাম্য মাতব্বরের কথাকাটাকাটি হয়। এর জের ধরে জলিলের পরিবারের বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিস ডাকা হয়। ওই সালিসে জলিল ও তাঁর ভাইয়েরা উপস্থিত না হওয়ায় তাঁদের অনুপস্থিতিতে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ঘোষণা করা হয় জরিমানার টাকা না দিলে জলিল, আলাল, জালাল ও বেলাল হোসেন ওই চার ভাইকে একঘরে (সমাজচ্যুত) করে রাখা হবে। আর এদের সঙ্গে গ্রামের যে ব্যক্তি কথা বলবে, তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
এমন ঘোষণার পর স্থানীয় ও বাইরের নেতাকর্মীরা অনেক চেষ্টা করেও বিষয়টি আপস মীমাংসা করতে পারেননি। সবশেষে মসজিদে নামাজ পড়াও বন্ধ হয়ে যায় বেলালসহ ওই চার ভাইয়ের পরিবারের। এ অবস্থায় গত বুধবার রাতে তারাবির নামাজ পড়ার জন্য বেলাল হোসেন গ্রামের মসজিদে অজুখানায় অজু করতে গেলে তাঁকে মসজিদের বাইরে বের করে দিয়ে মসজিদের ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে নামাজ আদায় করে গ্রামের লোকজন। এরপর নামাজ শেষে গ্রামের লোকজন জলিলের বাড়িতে হামলা চালায়।
এ সময় হামলাকারীরা বাড়ির বেশকিছু জিনিসপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করে এবং হামলাকারীদের মারপিটে জলিল ও তাঁর স্ত্রী মোরশেদাসহ তিন-চারজন আহত হন। আহতদের মধ্যে মোরশেদাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরের দিন আবদুল জলিল বাদী হয়ে ২০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ শুক্রবার আকরাম হোসেন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ ব্যাপারে ভেবরাগাড়ী গ্রামের মাতব্বরদের সহযোগী বাদশা হোসেন উল্টো অভিযোগ করে বলেন, ‘মসজিদ থেকে বের হয়েই বেলাল ও তাঁর লোকজন আমাদের ওপর চড়াও হয়ে মারপিট করেছে।’
সমাজচ্যুত জলিলের ছেলে জুয়েল, জালাল উদ্দীনের স্ত্রী এসমত আরা ও বেলাল হোসেনের স্ত্রী ফাইমা জানান, গ্রামের মাতব্বর ফজের আলী, দুদু হোসেন, আফছার আলী, নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, আবদুস সালামসহ সমাজের লোকজন তাঁদের প্রায় সাত মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রেখেছেন। মসজিদে নামাজ পড়তে দেন না, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়ার সময় গ্রামের কোনো যানবাহনে চড়তে দেন না। মাঝেমধ্যেই পরিবারের সবার ওপর চড়াও হতো লোকজন। এ অবস্থায় প্রতিকার চেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে থানায় মামলার খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদের ওপর আবার হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে শুক্রবার। যেকোনো মুহূর্তে আবারও হামলা করতে পারে। বর্তমানে সেখানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে প্রধান মাতব্বর ফজের আলী বলেন, ‘আমরা কাউকে একঘরে করিনি। জলিল বা বেলালকে নামাজ পড়তেও বারণ করিনি। মসজিদের ইমাম পছন্দ নয় মর্মে তারাই মসজিদে যায় না। আমরা কোনো মারপিট বা জরিমানাও করিনি। তারাই আজ শুক্রবার দুদু হোসেন নামের একজনকে বেদম মারপিট করেছে। তারা স্বেচ্ছায় মসজিদে ২০ হাজার টাকা (জরিমানার টাকা) দিতে চেয়েও দেয়নি।’
এ ব্যাপারে রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ খান জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।