কামারুজ্জামানের ফাঁসি বহালে বিশিষ্টজনদের সন্তোষ প্রকাশ
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় বহাল থাকায় দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বার্তা সংস্থা বাসসকে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, এই রায়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিজয় হয়েছে। এ রায় মানব সভ্যতার বিজয়। ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এ রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে। জাতিকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে পরিত্রাণে এ রায়টি আরো একটি ধাপ হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, এ আসামির বিরুদ্ধে সব বিচারিক প্রক্রিয়া আজ শেষ হলো। তবে তিনি প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বাসসকে বলেন, এই রায়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের আত্মা শান্তি পাবে এবং দুই লাখ মা-বোন যাঁরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাঁদের মনোকষ্ট সামান্যতম হলেও প্রশমিত হবে। তিনি বলেন, কামারুজ্জামান আল-বদর বাহিনীর নেতা হিসেবে একাত্তর সালে খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজের মতো অপরাধ করেছিলেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে এই রায় যথার্থ হয়েছে।
ড. আনোয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি সভ্য দেশ। এ ধরনের রায়ের জন্য আমরা অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। শেষ পর্যন্ত সেই ন্যায্য রায় ও ন্যায়বিচার পেয়েছি।’ তিনি বলেন, সত্যের জয় হয়েছে। এই রায় আমাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নতুনভাবে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
প্রসিকিউটর সাইয়েদুল হক সুমন বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এ রায়ে জাতির আশা পূরণ হযেছে। এ দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছিল, সেই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে রায়টি মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় বহাল রেখে গত বছর ৩ নভেম্বর রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করা হয়। বেঞ্চের অপর তিন বিচারপতি হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন আজ খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
ট্রাইব্যুনাল তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে হত্যার দায়ে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিল। এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে আসামি কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
আপিলের রায়ে বলা হয়, তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে।