এজিএম স্থগিত, কারখানা রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন
নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে অবস্থিত নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস নিয়ে জটিলতা নতুন মোড় নিয়েছে। ৩৮২টি শেয়ার কেনার দাবিদার জয়নাল মোল্লা গংকে যৌথ মূলধনী কোম্পানি অনুমোদন না দেওয়ায় আজ শনিবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডাকা বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফটকে ওই সভাস্থলে যেতে আজ শেয়ারহোল্ডার শ্রমিকদের বাধা দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। একই সময় ওই কার্যালয়ের সামনে মিলটি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করে নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ শেয়ারহোল্ডার রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। ৫১০ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে বিনামূল্যে শতভাগ শেয়ার দেওয়া এই সরকারি কারখানা পরিচালনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে।
শেয়ারহোল্ডারদের একটি অংশের দাবি, ৩৫ কোটি টাকা পুঁজি বিনিয়োগের দাবিদার জয়নাল আবেদিন মোল্লা গংকে ৭০০ কোটি টাকা মূল্যের এই মিলটির মালিক বানানোর চেষ্টা চলছে।
শ্রমিকরা জানান, ১৯২৩ সালে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বিটিএমসি মিলটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। লোকসানের ভারে নুয়ে পড়ায় ১৯৯৬ সালে সরকার মিলটি বন্ধ করে দেয়। পরে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৫১০ শ্রমিক-কর্মচারীকে শতভাগ শেয়ার দিয়ে মিলটির স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা প্রদান করে।প্রজ্ঞাপন অনুসারে, শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিতে ২০১১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ননী গোপাল সাহা ও আবুল কাশেম নামের দুই ব্যবসায়ী কারখানাটি পরিচালনা করে।
নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ শেয়ারহোল্ডার রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হোসেনের অভিযোগ, ২০১১ সালের ৫ মার্চ ১২ সদস্যের পরিচালনা কমিটির সভায় জানানো হয়, নতুন বিনিয়োগকারী শেয়ারহোল্ডারদের এককালীন সম্মানী দিয়ে মিলটি পুরোদমে চালু করে লভ্যাংশ দেবে। ২০১২ সালে ৩০০ শেয়ারহোল্ডারকে সম্মানী দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে পরিচালনা পরিষদ সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয় এবং বিনিয়োগ বোর্ডে জমা দেওয়ার কথা বলে কাগজপত্র জমা নেয়। পরে প্রচার করা হয়, যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁরা নিট কনসার্নের মালিক জয়নাল আবেদিন মোল্লার কাছে শেয়ার বিক্রি করেছেন। অথচ শেয়ার হস্তান্তরের চুক্তি অনুযায়ী এসব শেয়ার কারো কাছে বরাদ্দ বা হস্তান্তর করা যাবে না। ২০১৩ সালের ২৪ জুন রিট করা হলে হাইকোর্ট কোম্পানির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জয়নাল আবেদিন মোল্লার লোকজন মিলের সব স্থাপনা ভেঙে মেশিনপত্র খুলে নিয়ে যায়। মিলের ৫০টি ঘরে ৫০ শেয়ারহোল্ডারের পরিবার দুই বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। মিলের প্রধান প্রবেশপথে সন্ত্রাসী বাহিনী বসিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
শেয়ারহোল্ডারদের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ জানুয়ারি হাইকোর্ট নতুন পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কারখানার এজিএম আহ্বান করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল ১০টার দিকে এক-দেড়শ সন্ত্রাসী গেটে অবস্থান নেয়। তারা দোতলায় ডাকা সভায় যেতে বাধা দেয়। এ সময় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সরিয়ে দেয় সন্ত্রাসীদের।
পরে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সভা স্থগিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আনিছুর রহমান মিঞা সাংবাদিকদের জানান, যে পক্ষ ৩৮২টি শেয়ার কিনেছে, যৌথ মূলধনী কোম্পানি থেকে তাদের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে আরো বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে কোনো পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ জন্যই মিলের এজিএম স্থগিত করা হয়েছে। সভায় আসতে শেয়ারহোল্ডারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ কেউ করেনি।
নিট কনসার্ন গ্রুপের কর্ণধার জয়নাল আবেদিন মোল্লা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তিনি বৈধভাবেই মিলের বেশিসংখ্যক শেয়ার কিনেছেন। অন্যায় বা জোরপূর্বক কিছু করেননি।
এদিকে বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শেয়ারহোল্ডার রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ মিলটি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করে। তারা নতুন বিনিয়োগকারীকে ‘রাক্ষস’ আখ্যা দিয়ে তাঁর কবল থেকে মিলটিকে রক্ষার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। কর্মসূচিতে শেয়ারহোল্ডার ছাড়াও তাঁদের পরিবারের লোকজন অংশ নেয়।