সুস্থ না হতেই রোগীদের বাড়ি পাঠানোর অভিযোগ
হয়তো এখনো ঠিকঠাকমতো সুস্থ হয়ে ওঠেননি রোগী। তবু হাসপাতালে ভর্তি থাকার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁর নাম। এর অর্থ, চিকিৎসা শেষ, এখন ছাড়তে হবে হাসপাতাল।
আর যাঁরা হাসপাতালের তালিকা থেকে নাম কাটা যাওয়ার পরও বাড়ি ফিরতে রাজি হচ্ছেন না, তাঁদের ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার কথা বলে রেফার্ড করা হচ্ছে।
ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে এমন ঘটনা ঘটছে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। এর কারণ শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। ফলে হাসপাতাল ছাড়তে শুরু করেছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। তাই চাপ কমাতে রোগীদেরও বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত দু-তিনদিনে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে প্রায় ১০০ জন রোগীর নাম কাটা হয়েছে। গণহারে নাম কাটায় পুরোপুরি সুস্থ না হয়েও বাধ্য হয়েই বাড়ি ফিরছেন রোগীরা। যারা বাড়ি যেতে চাইছে না, তাদের ঢাকায় রেফার্ড করা হচ্ছে।
হাসপাতালের এই কর্মকাণ্ডের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
সূত্রটি জানায়, প্রতিবছরই ঈদের ছুটির আগে রোগীদের গণহারে নাম কাটা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর একটু আগে থেকেই রোগীদের নাম কাটা শুরু হয়। এমনকি অপারেশনের রোগীদেরও তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আজ বুধবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে ২২ জন, নারী মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে ১৮ জন, পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড থেকে ১০ জন, নারী সার্জারি ওয়ার্ড থেকে ৮ জন এবং অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে বাকি রোগীদের নাম কাটা হয়েছে।
নাম কাটাতে অনিচ্ছুক এ রকম আটজন রোগীকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে এবং নয়জন রোগীর অপারেশনের তারিখ পরিবর্তন করে ঈদের পরে দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় সূত্রটি।
ঝালকাঠির নলছিটি থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আবদুর রহমান (৫২) জানান, বুকে ব্যথার কারণে চারদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু পুরোপুরি সেরে ওঠার আগেই সোমবার রোগীর তালিকা থেকে তাঁর নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। সুস্থ না হলে ঈদের পর আবার ভর্তি হতে বলেছেন চিকিৎসক।
তবে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান, যেসব রোগী সুস্থ হয়েছে কেবল তাদেরই নাম কাটা হয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিদিন তিন থেকে চারশ রোগী ভর্তি হয় হাসপাতালে। সে অনুযায়ী গড়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসাধীন থাকে হাসপাতালে। আর এই রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্স রয়েছেন আট শতাধিক। এই আট শতাধিক চিকিৎসক ও নার্সের বদলে এবার ঈদে দায়িত্ব পালন করবেন মাত্র ২০০ চিকিৎসক ও নার্স। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা জানায়, ঈদ উপলক্ষে আগেই চিকিৎসক ও নার্সদের ডিউটি রোস্টার তৈরি করা হয়েছ। ঈদের ছুটির তিন দিন হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ২০১ জন চিকিৎসক ও নার্স দায়িত্ব পালন করবেন। যার মধ্যে চিকিৎসক থাকবেন মাত্র ৫১ জন।
প্রশাসনিক শাখা সূত্রে আরো জানা যায়, হাসপাতালে ২০ জন রেজিস্ট্রারের মধ্যে ঈদে দায়িত্ব পালন করবেন চারজন, সহকারী রেজিস্ট্রার ১৫০ জনের মধ্যে থাকবে ৩২ জন, ১৭৭ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের মধ্যে থাকবেন ১৫ জন এবং চার শতাধিক নার্সের মধ্যে থাকবেন দেড়শ জন। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে প্রশাসনিক ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য শুধু হাসপাতাল পরিচালক একাই দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।
ঈদের ছুটিতে চিকিৎসক ও নার্সরা চলে যাওয়ায় সুস্থ না হওয়ার পরেও রোগীদের বাড়ি ফিরতে বাধ্য করা হচ্ছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুল হাসান সেলিম জানান, যদি কোনো অসুস্থ রোগীর নাম কাটা হয় তাহলে সেই ওয়ার্ডের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঈদের ছুটিতে চিকিৎসক ও নার্সদের ডিউটি রোস্টার ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এতে চিকিৎসাসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না বলেও মনে করেন তিনি।