নিখোঁজ ১০ যুবকের একজন হিন্দু থেকে মুসলমান হন
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকাশ করা নিখোঁজ ১০ যুবকের একজন সাইফুল্লাহ ওজাকির বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে। তাঁর নাম ছিল সুজিত দেবনাথ। তাঁর বাবা জনার্ধন দেবনাথ।
মুসলমান হওয়ার পর সুজিত দেবনাথের নাম পরিবর্তন করে হয় সাইফুল্লাহ ওজাকি।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাইফুল্লাহ জিনদপুর হুরুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। এরপর স্থানীয় লাউর ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে মেধা তালিকায় এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করে ২০০১ সালে জাপান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে দেশটির এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি ভর্তি জন। সেখানে বিবিএ ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। পরে তিনি জাপানের কিয়োতো ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি একজন জাপানি নারীকে বিয়ে করেন। তারপর স্ত্রীও মুসলমান হন। তাঁদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাবা জনার্ধন দেবনাথ একসময় ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতেন। কয়েক বছর ধরে স্থানীয় জিনদপুর বাজারে দোকান নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করছেন। সাইফুল্লাহ ওজাকির একটি ছোট বোন রয়েছেন। তিনি স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন। মা অনিতা রানী দেবী ও বাবা জনার্ধন দেবনাথ পত্রপত্রিকায় ছেলের সংবাদ পেয়ে খুবই কাতর হয়ে পড়েন।
সাইফুল্লাহর আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাইফুল্লাহ মুসলমান হওয়ার আগে যখন আসতেন, তখন তাঁর দাঁড়ি ছিল না। মুসলমান হওয়ার পর তাঁর মুখে দাঁড়ি দেখা যায়। ২০০৬ সালে ছোট বোন রীনা রানী দেবনাথের বিয়েতে এসেছিলেন। সর্বশেষ এসেছিলেন বছরখানেক আগে। সাইফুল্লাহ বাংলাদেশে এলে ঢাকায় অবস্থান করতেন। গ্রামের বাড়িতে খুবি বেশি থাকতেন না। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে চলে যেতেন। সপরিবারে ঢাকায় এলেও বাড়িতে আসতেন একা।
গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাইফুল্লাহ একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। নম্র ও ভদ্র স্বভাবের ছিলেন তিনি। তিনি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারেন তা কেউ ভাবতেও পারেননি।
বাবা জনার্ধন দেবনাথ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘তার (সাইফুল্লাহ) এ বিষয়গুলি বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হয়।’ মা অনিতা রানী বলেন, ‘আমি কোনোদিন তাঁর এ ঘটনা বিশ্বাস করতে পারি না।’
জিনদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রউফ বলেন, ‘সে আমার প্রতিবেশী। সে খুবই মেধাবী ছিল, সে এ কাজ করবে আমরা বিশ্বাস করি না।’ সাইফুল্লাহর শিক্ষক আবদুল করিমও একই কথা বলেন।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকার গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার সাইফুল্লাহর বিষয়ে তদন্ত করতে এসেছিলেন।