‘হঠাৎ টের পেলাম ঘরটা দুলছে’
“আমি বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। শার্টটা গায়ে জড়াচ্ছি। ছোট বোনটা ভাত খাচ্ছিল। হঠাৎ টের পেলাম ঘরটা দুলছে। ১০-১৫ সেকেন্ডের মধ্যে বুঝতে পারলাম ময়লা পানিতে ডুবে গেছি। দম বন্ধ হয়ে আসছে। ওপরে ওঠার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে তিন শিশু আমাকে আঁকড়ে ধরে আছে আর বলছে, ‘কাকা বাঁচান।’ মিনিট দশেক ময়লা পানি আর ধ্বংসস্তূপ, কচুরিপানার সঙ্গে সংগ্রাম করলাম। শিশুদের বাঁচাতে পেরেছি। কিন্তু আমার বোনটা মারা গেছে।”
এভাবেই ঘর দেবে যাওয়ার মুহূর্তের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন কাদের মিয়া। গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ঝিলপাড়ে বাঁশের খুঁটির ওপর নির্মিত দোতলা টিনের বাড়ি পানিতে দেবে যায়। ওই ঘটনায় ১২ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা।
গত বুধবারই ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার কোনো লাশ উদ্ধার হয়নি। এ নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক এ কে এম শাকিল নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আজ সকাল থেকে কেউ দাবি করছে না যে তাদের কোনো স্বজন নিখোঁজ আছে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আমরা উদ্ধারকাজ করছি। উদ্ধারকাজের স্থায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসন দেবে।’
কালো ঝিল, সারি সারি টিনের ঘর
সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, দোতলার টিনের ঘরটি ভেঙে ঝিলের একপাশে রাখা হয়েছে। নিচতলা একদমই পানির নিচে। পানি বলতে ময়লা কালো পানি আর কচুরিপানা। স্থানীয় বাসিন্দা রহিম মিয়া বলেন, ‘সেই বিএনপির আমলে ঝিলের পানি পরিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর আর কাউরে পানি ধরতে দেখিনি।’
ঝিলের এ পানির ওপরেই টিনের ঘরগুলো। ময়লা, কালো পানিতে ডুবে আছে বাঁশের খুঁটি। টিন, কাঠের পাটাতন দিয়ে ঘরগুলো বানানো। প্রতিটি ঘরের জন্য মাসে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হতো বলে স্থানীয়রা জানান। এসব ঘরে বাস করত নিম্ন আয়ের মানুষ। রাস্তা থেকে এসব ঘরে যেতে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে যেতে হয়। ভেঙে পড়া দোতলা টিনের ঘরের পাশ ঘেঁষে আরো দুটি লম্বা টিনের বাড়ি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাশে আরো একটা দোতলা টিনশেড ছিল। কাল ঘটনার পরও বাড়ির লোকজন ঘর ছেড়ে দিলে তা ভেঙে ফেলা হয়।
ময়লা পানি আর কচুরিপানার ওপর খাট, আলমারি ইত্যাদি আসবাবের পাশাপাশি ফ্রিজ, টেলিভিশনও ভাসতে দেখা গেছে। ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ ছিল? প্রশ্ন করতেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রতিটা ঘরে বিদ্যুৎ তো ছিলই, গ্যাস ছিল, পানির লাইন ছিল। সব অবৈধ। অন্য লাইন থেকে টেনে টেনে এসব ঘরে দেওয়া হয়।’