কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্পে পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ
রামপাল ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে পরিবেশগত আইন লঙ্ঘনসহ ভূমি অধিগ্রহণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। সংস্থাটির দাবি, প্রকল্প দুটির পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষার আগেই তড়িঘড়ি করে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার ধানমণ্ডির টিআইবির কার্যালয়ে ‘রামপাল ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প : ভূমি অধিগ্রহণ ও পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব অভিযোগ তুলে ধরে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, শিল্প এলাকা কিংবা ফাঁকা জায়গা না হলেও রামপাল ও মাতারবাড়ীতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। সুন্দরবন সংলগ্ন রামপাল প্রকল্পে অবস্থান ছাড়পত্র পাওয়ার পর শর্ত ভঙ্গ করে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষার আগেই শুরু হয়ে গেছে প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ। এমন অভিযোগ করে টিআইবি বলছে, প্রকল্পে বিবেচনায় আনা হয়নি প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হলে সুন্দরবনের পরিবেশের সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়টি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বন বিভাগেরও মতামত গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ করা হয়।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে জাইকার দেওয়া ঋণ জাপান সরকারের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দ হিসেবে দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে উল্লেখ করে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রকল্প দুটির সার্বিক তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশেরও দাবি জানান।
টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, ‘এতটা ক্ষতি করে ওখানেই এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার কী যুক্তি থাকতে পারে? আমরা যখন বিভিন্ন সময়ে এখানে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ বা ওখানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আছেন তাঁদের সাথে কথা বলেছি, তাঁরা অনেকেই কিন্তু অনেক ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না। আমি পুরোপুরি তাঁদের অবস্থা বুঝেই এ কথাটা বলছি যে, অনেক সময় আমরা উত্তর পেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী সমস্ত ব্যাপারে সবকিছু জানেন। তিনি যেহেতু এ ব্যাপারে সবকিছু জেনেবুঝেই এই সম্মতি দিয়েছেন, অতএব এটা ভালো।’
টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকল্প দুটির ভূমি অধিগ্রহণ নিয়েও চলছে ব্যাপক অনিয়ম। প্রকল্প এলাকায় ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। অথচ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আগেই মোট ক্ষতিপূরণের পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ ঘুষ হিসেবে হাতিয়ে নিচ্ছে দালালরা। জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরেও ঢালতে হচ্ছে ঘুষ। শুধু তাই নয়, মাতারবাড়ী প্রকল্প এলাকায় চিংড়ি চাষ না হলেও পতিত ঘেরের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবির উদাহরণও উঠে এসেছে সংস্থাটির গবেষণায়।
ধানমণ্ডির টিআইবি কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার ‘রামপাল ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প : ভূমি অধিগ্রহণ ও পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান