সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন ‘বেড়াই বাংলাদেশ’
ভ্রমণ ছিল তাঁর নেশা। আর ওই নেশাকে পেশার সঙ্গে সমন্বয় করে গড়ে তুলেছিলেন ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘বেড়াই বাংলাদেশ’, ইংরেজিতে ‘ট্রিপ টু বাংলাদেশ’। আর এই ট্রিপ টু বাংলাদেশের ওয়েবসাইট কিংবা ফেসবুক পেজ হয়ে উঠেছিল হাজারো ভ্রমণপিপাসুর তথ্যের উৎস হিসেবে। ‘বেড়াই বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খ্যাতি ছিল তাঁর। অনেকে তাঁকে সম্বোধন করতেন বাংলাদেশে আধুনিক ভ্রমণের পথিকৃৎ বলেও।
পর্যটকদের প্রিয় সেই পথিকৃৎ মাহমুদ হাসান খান আর নেই। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
পর্যটন বিশেষজ্ঞ ও লেখক মাহমুদ হাসান খানের বয়স হয়েছিল ৪৮ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই শিশু ছেলে তাজিন ও তাসওয়ান, আত্মীয়-স্বজনসহ ভ্রমণপ্রিয় অসংখ্য ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
মাহমুদ হাসান খান দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের পর্যটন নিয়ে কাজ করছেন। ‘ট্রিপ টু বাংলাদেশ’ নামে একটি ট্যুর কোম্পানির কর্ণধার ছিলেন তিনি, যার মাধ্যমে বিদেশি ট্রাভেলারদের বাংলাদেশের প্রকৃতি দেখাতেন। মূলত কাজ করতেন গ্রামীণ পর্যটন নিয়ে। এ ছাড়া বিদেশি ট্রাভেলারদের সহযোগিতাও করতেন বিনা ফিতে। তাঁর এ কাজের জন্য বিশ্ববিখ্যাত ট্রাভেল গাইড বুক লোনলি প্লানেট তাঁকে বলেছে : Guardian Angel of Travelers in Bangladesh। এ ছাড়া বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ফোন কোম্পানি তাঁকে নিয়ে ‘চলো বাংলাদেশ’ নামে একটি টিভি সিরিজ করেছে। ফেসবুকে ‘বেড়াই বাংলাদেশ’ নামের একটি পেজের অ্যাডমিন ছিলেন তিনি। এনটিভি অনলাইনে ভ্রমণ বিষয়ে তিনি নিয়মিত লিখতেন।
মাহমুদ হাসান খানের নিকটজন ট্রাভেলার রাজু মোংলা জানান, কয়েক দিন আগে মাহমুদ হাসান খান হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নেওয়ার পর বাসায় চলে আসেন। এরপর গত বুধবার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করার পর তাঁর হার্টে তিনটি রিং পরানো হয়। গতকাল রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে দ্বিতীয় দফা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
এদিকে গতকাল রাতে মাহমুদ হাসান খানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শোক প্রকাশ করে মাহমুদ হাসান খানকে স্মরণ করেন। অনেকে তাঁদের ফেসবুক প্রোফাইল ও কাভার ছবি পরিবর্তন করে শোকের কালো ছবি দেন।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কাজীপাড়ায় মাহমুদ হাসানের বাড়ির সামনে দেখা যায় শোকার্ত ট্রাভেলারদের ভিড়। বাড়ির সামনে লাশবাহী গাড়িতে নীরব, নিথর হয়ে শুয়ে আছেন সবার প্রিয় মাহমুদ ভাই। পাশে চিৎকার করে কাঁদছিল বড় ছেলে। বিলাপ করছিল, ‘বাবা, তুমি একবার ওঠ। বাবার নাকের তুলাগুলো খুলে ফেল। বাবা, তুমি একবার কথা বলো।’
এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবার চোখে তখন অশ্রু। প্রিয়জন হারানোর শোকে হৃদয়ের কান্না বের হচ্ছিল পানি হয়ে। আসরের পর কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মাহমুদ হাসানের জানাজা হয়। জানাজা শেষে কাজীপাড়া কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। সবাইকে কাঁদিয়ে সেখানে চিরনিদ্রায় তিনি।
ট্রাভেলার রাজু মোংলা জানান, মাহমুদ হাসান ভাইয়ের জন্য আগামী মঙ্গলবার বাদ আসর কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে সবাইকে উপস্থিত হয়ে মরহুমের রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।