‘হিন্দু, খ্রিস্টান ও শিয়া সম্প্রদায় ছিল টার্গেট’
‘আমি জেএমবির কয়েকটি সভায় যাই। এ সভাগুলোতে আমাদের বলা হতো, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান এবং শিয়া সম্প্রদায়কে টার্গেট করে তাদের হত্যা করা বা কীভাবে হত্যা করা যায় তার সহযোগিতা করা।’
র্যাবের তৎপরতায় আত্মসমর্পণের পর ‘নব্য জেএমবি’র সদস্য বগুড়ার আবুল হাকিম এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানান।
হাকিমের সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেন গাইবান্ধার মাহমুদুল হাসান বিজয়। আজ বুধবার দুপুরে বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের উপস্থিতিতে তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এদের মধ্যে হাকিম ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় নিহত জঙ্গি খায়রুলের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন।
অনুষ্ঠানে কলেজ শিক্ষার্থী হাকিম ও বিজয় জানান, আলোকিত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁদের। সে পথে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলে অন্ধকার জগতের কিছু মানুষ। নব্য জেএমবির ব্যানারে তাঁদের নাশকতা চালানোর প্রশিক্ষণ দেয় জঙ্গিরা। তবে রাজধানীর হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর নিজেরাই অনুধাবন করেছে তারা কতটা ভুল পথে ছিল।
অনুষ্ঠানে মাহমুদুল হাসান বিজয় বলেন, ‘আমি যে পথে ছিলাম তা আসলেই একটি অন্ধকারের পথ। এখানে বাঁচার কোনো ইচ্ছে মানুষের থাকে না। আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বানে আমি উদ্বুদ্ধ হই।’
হাকিম ও বিজয়ের মতো বাকি জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করে যদি সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে চায়, তাহলে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহায়তা করবে বলে জানান র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘র্যাবের তত্ত্বাবধানে আমরা তাদের পুনর্বাসন করব, যাতে করে তারা সমাজের মূলধারায় ফিরে আসতে পারে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, আত্মসমর্পণ করা হাকিম ও বিজয়কে নাশকতার জন্য প্রশিক্ষণ দেয় জামায়াত-শিবির। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা জঙ্গিদের সরকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, দুই জঙ্গি সদস্য অকপটে স্বীকার করেছেন, কারা তাঁদের বড় ভাই। সেই জামায়াতে ইসলামীর সদস্য, শিবিরের সদস্য। তারাই তাঁদের (আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি) বিপদগ্রস্ত করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আত্মসমর্পণ করুন। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করে আনবে।’
জঙ্গিবাদ ত্যাগ করে আলোর পথে ফিরে আসার জন্য অনুষ্ঠানে হাকিম ও বিজয়কে পাঁচ লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়।