অবজ্ঞা নিয়েই চলে গেলেন কিশোরগঞ্জের ভাষা সৈনিক
শেষ পর্যন্ত অবজ্ঞা ও অবহেলা মাথায় নিয়েই চির বিদায় নিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার নেতৃস্থানীয় ভাষা সৈনিক ও সাবেক তথ্য কর্মকর্তা আলহাজ হেদায়েত হোসেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েস হয়েছিল ৮৩ বছর।
১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের সময় হেদায়েত হোসেন কিশোরগঞ্জ মহকুমার সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুখে ভুগছিলেন।
মরহুমের মেয়ে শাহপার শারমীন সুমি বলেন, ‘সোমবার বিকেলে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় আমার বাসায় বাবা (হেদায়েত হোসেন) হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে লালমাটিয়ার সিটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
হেদায়েত হোসেন তিন ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয় ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। প্রায় এক বছর আগে তাঁর স্ত্রী ও এক ছেলে ইন্তেকাল করেন। মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের শহীদি মসজিদে জানাযা শেষে হয়বতনগর সাহেববাড়ী গোরস্তানে মরহুমের দাফন সম্পন্ন হবে বলে তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। হেদায়েত হোসেনের বাসভবন জেলা শহরের ফিসারী রোড এলাকায় অবস্থিত।
মহান ভাষা আন্দোলনের সময় হেদায়েত হোসেন গোলাপ ছিলেন স্থানীয় গুরুদয়াল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক।
ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সে সময় তিনি কিশোরগঞ্জ মহকুমার সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়কের গুরু দায়িত্বও দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা জীবন শেষে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন এবং জেলা তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রতি বছরই জেলা প্রশাসন থেকে ভাষা সৈনিকের সম্মাননা পেয়ে আসছিলেন হেদায়েত হোসেন। কিন্তু তিন বছর বছর আগে হঠাৎ করেই অজ্ঞাত কারণে তাঁর নাম ভাষা সৈনিকের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। জীবন সায়াহ্নে এসে ভাষা সৈনিকের তালিকা থেকে বাদ পড়ায় তাঁর মনে তীব্র ক্ষোভ ও বেদনাবোধ কাজ করত। সংবাদকর্মীসহ পরিচিতজনদের কাছে তিনি এ নিয়ে প্রায়ই তাঁর দুঃখ ও অপমানবোধের কথা প্রকাশ করতেন। এনটিভি ও এনটিভি অনলাইনসহ বিভিন্ন এ নিয়ে মিডিয়াতে প্রতিবেদন প্রচার হলেও জেলা প্রশাসন থেকে এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
হেদায়েত হোসেনের মৃত্যুতে সহযোদ্ধা ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ আ. ফ. ম. শামছুল হুদা গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘হেদায়েত ও আমি এক সাথেই ভাষা আন্দোলন করেছি। ভাষা আন্দোলনে উনার অবদান আছে। কিন্তু গত তিন বছর ধরে তাঁকে ভাষা সৈনিকের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। উনার প্রতি এ ধরনের আচরণ আমার খুব খারাপ লাগে। হেদায়েত হোসনকে শেষ জীবনে এভাবে মনঃপীড়া দেওয়া অত্যন্ত অনুচিত কাজ হয়েছে।’