‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২ শিবির নেতা আটক হয়েছিল দেড় মাস আগে!
ঝিনাইদহে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত দুজন জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের নেতা। গত ৭ সেপ্টেম্বর সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা তাঁদের আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেছেন পুলিশ সদস্যরা।
আজ মঙ্গলবার ভোর পৌনে ৪টার দিকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের বাইপাস সড়কের ভুটিয়ারগাতি এলাকায় পুলিশের গুলিতে তাঁদের মৃত্যু হয়। এর আগে তাঁরা বোমা ছুড়ে মারেন বলে পুলিশ দাবি করেছে।
নিহত দুজন হচ্ছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কেয়াবাগান আদর্শ কলেজের প্রভাষক জহুরুল ইসলাম (৩৩) ও হারবাল চিকিৎসক তারেক হাসান সজীব (৩০)। এঁদের মধ্যে জহুরুল ইসলাম ঝিনাইদহ শহর জামায়াতে ইসলামীর আমির ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক জেলা সভাপতি। আর সজীব শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন।
পুলিশের ভাষ্যমতে, আজ ভোর রাতে জেলা শহরের আলহেরা মোড়ে তিনটি মোটরসাইকেলে করে সাত-আটজন ব্যক্তি টহল পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বাইপাস সড়ক ধরে পালানোর চেষ্টা করে। পথে স্পিডব্রেকার পার হওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেল থেকে দুজন ছিটকে পড়েন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজবাহার আলী শেখ জানান, মোটরসাইকেল থেকে পড়ে পালানোর সময় পুলিশের ওপর বোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। তারপরই গুলি চালায় পুলিশ। এতে দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়। বাকিরা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি তাজা বোমা, দুটি শাটার গান, দুটি গুলি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করেন আজবাহার আলী শেখ।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্র নাথ সরকার সাংবাদিকদের জানান, জহুরুল ইসলামের নামে সাতটি ও সবুজের বিরুদ্ধে থানায় একটি নাশকতার মামলা আছে।
নিহত জহুরুল ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অবসরপ্রাপ্ত শাখা কর্মকর্তা সমশের আলী মোল্লার ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। জহুরুলরা শহরে পাউবোর কোয়ার্টারের বাসায় থাকতেন।
নিহত অপরজন তারেক হাসান সজীব সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আবদুল লতিফের ছেলে। তিনি বিবাহিত। কিছুদিন আগে তাঁর যমজ দুটি মেয়েসন্তান হয়।
নিহত জহুরুল ইসলামের ভগ্নিপতি মো. লোকমান হোসেন বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলার বুজিডাঙ্গামুন্দিয়া গ্রামে বিয়ে করেন জহুরুল। তবে তাঁর কোনো সন্তান নেই। তিন বছর ধরে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর জেলা শহরের দিশারী ইনস্টিটিউট থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা জহুরুলকে আটক করেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নিহত তারেক হাসান সজীবের স্বজনদেরও দাবি, গত ৭ সেপ্টেম্বর সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা সজীবকে আটক করেন। তাঁরাও থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি এবং কেউ সজীবের সন্ধানও দিতে পারেনি।
তবে স্বজনদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
আজ দুপুর ২টার দিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গের সামনে দেখা যায়, সেখানে নিহতদের স্বজনদের ভিড়। লাশ দুটি একটি রিকশাভ্যানে রাখা হয়েছে। বেলা ৩টার দিকে লাশের ময়নাতদন্ত শুরু করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা।