সাবেক এমপি টিপুসহ স্ত্রী-পুত্রকে অব্যাহতি
হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক শামারুখ মাহজাবীন সুমি হত্যা মামলা থেকে যশোর-৩ (মনিরামপুর) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য টিপু সুলতান এবং তাঁর স্ত্রী ও পুত্রকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত এ মামলার বাদীর দাখিল করা নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁদের অব্যাহতি দেন।
হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য টিপু সুলতান, তাঁর স্ত্রী হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ডা. জেসমিন আরা খানম এবং ছেলে হুমায়ুন সুলতান সাদাবকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে চলতি বছরের ২৯ মার্চ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রমনা ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মুন্সী রুহুল কুদ্দুস আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঘটনার দিন সকালে তাঁর স্বামীর সঙ্গে বাসা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হন। কাঁটাবন এলাকায় পৌঁছালে ডা. প্রত্যয় বিশ্বাস ভিকটিম ডা. শামারুখ মাহজাবীনকে ফোন করেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।’
‘একপর্যায়ে হুমায়ুন সুলতান তাঁর স্ত্রী ডা. শামারুখ মাহজাবীনের মোবাইল ফোন দিয়ে ডা. প্রত্যয় বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে কলব্যাক করেন। কলব্যাকের মাধ্যমে তিনি কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারেন, কোনো পুরুষ তাঁর স্ত্রীকে ফোন করেছে। এ ঘটনা নিয়ে ডা. শামারুখ মাহজাবীন অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন এবং গাড়ি থেকে নেমে রিকশায় বাসায় যান। এর পর দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে কোনো একসময় তাঁদের শয়নকক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত বাথরুমের জানালার গ্রিলে নিজের ওড়নায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।’
ডা. শামারুখ ডায়েরিতে তাঁর বাবাকে উদ্দেশ করে লিখে গেছেন, ‘তোমার মেয়েটা অনেক দুর্বল। ছোটখাটো সমস্যাও ফেস করতে পারে না। সারাক্ষণ কষ্ট পেয়ে যায় অকারণে। তাই আজ সিদ্ধান্ত নিল যে, She is incompatible to live।’ ওই ভুল বোঝাবুঝির কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা ফেস করতে না পারায় ডা. মাহজাবীন আত্মহত্যা করেছেন বলে সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রকাশ পায়। ডায়েরিতে শামারুখ আরো লিখেছেন, ‘Partial hanging 100% suicidal. Court-এ যদি কোনোরকমে ওঠে আমি কীভাবে মরলাম, এটাই প্রমাণ হবে। তাই Please আমার আর এই পরিবারের কোনো দুর্নাম হতে দিও না।’ তিনি তাঁর লেখা ডায়েরিতে আত্মহত্যা করার বিষয়ে কাউকে দায়ী করেননি।
সহকারী সুপার মুন্সী রুহুল কুদ্দুসের এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ৫ মে ডা. শামারুখ মাহজাবীনের বাবা মামলার বাদী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম আদালতে নারাজি দাখিল করেন। ওই নারাজিতে বলা হয়, ‘তদন্তকালে গত ২০ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাঁদের অফিসে ডেকে নিয়ে আমার সাক্ষীদের হুমকি দেন। সাক্ষীদের কোনো বক্তব্য শোনেননি।’
গত বছরের ১৪ নভেম্বর শামারুখ হত্যার অভিযোগে তাঁর বাবা মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ধানমণ্ডি থানায় মামলাটি দায়ের করেন। খান টিপু সুলতান ছাড়া আসামিদের বাকি দুজন নিহতের স্বামী খান টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ুন সুলতান সাদাব ও তাঁর মা জেসমিন আরা খানম।
গত বছরের ১৩ নভেম্বর রাজধানীর ধানমণ্ডির ৬ নম্বর সড়কের শ্বশুরের বাসভবনে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মাহজাবীনকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ওই রাতেই ডা. শামারুখের বাবা তিনজনকে আসামি করে হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা করেন।
পরের দিন সুমির মৃতদেহ নিয়ে যশোরের কারবালা কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর ১০ দিন পর গত বছরের ২৩ নভেম্বর ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়।
ওই প্রতিবেদনেও সুমি আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। এর পর ঘটনাটি সুপরিকল্পিতভাবে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে বাদী অভিযোগ আনেন।
এর পর ২৫ নভেম্বর আদালতে শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ কুমার সাহা ওই দিনই মাহজাবীনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ফের ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন।
শামারুখ মাহজাবীন ওরফে সুমি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। দেড় বছর আগে পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে ধানমণ্ডির ৬ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার ভাড়া বাসায় শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতেন তিনি।