নীলফামারীতে বেইলি ব্রিজ যেন মৃত্যুফাঁদ
নীলফামারীর বিভিন্ন সড়কে আশির দশকে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ ১২টি বেইলি ব্রিজ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়েই চলাচল করছে ছোট-বড় সব ভারী যানবাহন। এর ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেহাল এই বেইলি ব্রিজগুলো গত কয়েক বছরে পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে।
জেলা সদর, ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বেইলি ব্রিজগুলোতে সরেজমিনে দেখা গেছে, সব বেইলি ব্রিজই জরাজীর্ণ। নাটবল্টু ভেঙে যাওয়ায় নড়বড়ে হয়ে গেছে সব ব্রিজই। কয়েকটি ব্রিজের আবার লোহার পাটাতনের মাঝখানেই বিশাল গর্ত।
সাধারণত পূর্ণাঙ্গ ব্রিজ নির্মাণ করার আগে এক থেকে দুই বছরের জন্য লোহার তৈরি অস্থায়ী বেইলি ব্রিজগুলো নির্মাণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে এ অস্থায়ী ব্রিজগুলো আর পূর্ণাঙ্গ সেতুতে রূপ নেয়নি।
নীলফামারীর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিকী জানান, জেলার হরতকীতলা, আউলিয়াখানা, মধুপুর, আনন্দ বাবুর পুল, বাহাগিলি, দুহুলী, টেঙ্গনমারী, হাফিজিয়া, গোমনাতী, চিলাহাটি, নাউতারা ও রামগঞ্জ সড়কের ওপর আশির দশকে এই বেইলি ব্রিজগুলো নির্মিত হয়।
স্থায়ীভাবে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় বেইলি ব্রিজগুলোর ওপর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে আসছে। নীলফামারী-ডোমার সড়কের হরতকীতলা মোড়ে যমুনেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত বেইলি ব্রিজটির ওপর দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ব্রিজটিতে লাগানো বিভিন্ন স্থানের পাত সরে ও দেবে যাওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এমনিতেই বহুদিন ধরে ব্রিজটি নড়বড়ে ছিল। তার ওপর ২০১৩ সালে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার সময় দুর্বত্তরা হামলা চালিয়ে ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত করে।
নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিকী আরো জানান, একই অবস্থা জলঢাকা উপজেলা শহরের আউলিয়াখানা বেইলি ব্রিজেরও। ব্যবহার অনুপযোগী হলেও উপায় না থাকায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ব্রিজটির ওপর দিয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করতে হচ্ছে। কিছুদিন আগে ব্রিজটির সংস্কারকাজ করার জন্য লাল পতাকা উত্তোলন করে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় সড়ক বিভাগ। বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে সেখানে স্থায়ীভাবে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও কোনো ফল আসেনি। তার ওপর ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজগুলোর ওপর দিয়ে অতিরিক্ত মালামাল নেওয়া এবং যানবাহনের চাপ বাড়ার কারণে এগুলো দিন দিন আরো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিকী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বেইলি ব্রিজগুলোর পরিবর্তে সেখানে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে এখনো কোনো বরাদ্দ বা অনুমোদন আসেনি। তবে হরতকীতলা ব্রিজ নির্মাণের দরপত্র এরই মধ্যে আহ্বান করা হয়েছে। এটির কাজ শুরু হলে আগামী বছর আউলিয়াখানা ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।