রাজশাহীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জামায়াত নেতা নিহত
রাজশাহী মহানগরে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহত ব্যক্তি শিবিরের ক্যাডার। পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তবে পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ নিয়ে গত ৯ জানুয়ারি থেকে ঢাকাসহ দেশের ছয় জেলায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জামায়াত ও ছাত্রদলের চারজন নেতা-কর্মী রয়েছেন।
রাজশাহীতে নিহত নুরুল ইসলাম শাহীন মহানগর জামায়াতের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সেক্রেটারি ও বিনোদপুর এলাকার ইসলামিয়া কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। নগরের মালোপাড়ায় পদ্মা অফসেট প্রেস নামে তাঁর একটি ছাপাখানা রয়েছে।
আজ বুধবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে দেখা যায়, শাহীনের লাশ পড়ে আছে। পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা কান্নাকাটি করছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য পরিচয় দিয়ে কয়েকজন লোক ছাপাখানা থেকে শাহীনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর ডিবি কার্যালয়ে ফোন দিলে তারা আটকের কথা অস্বীকার করে। রাত ১২টার দিকে আবার ডিবির কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, সকালে শাহীনকে আদালতে হাজির করা হবে। সকালে তাঁরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে খবর পান শাহীন আর নেই। খবর পেয়ে তাঁরা এসে শাহীনের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পান।
শাহীনের স্ত্রী মাসুমা আক্তার এনটিভিকে বলেন, ‘ডিবি পুলিশের কাছে খোঁজ নেওয়া হলো। ওরা ১২টার আগ পর্যন্ত কোনো খবর দিল না। ১২টার পর বলল, হ্যাঁ আমাদের কাছে আছে, খুব ভালো আছে। কোনো সমস্যা নাই। সকালে ননদ বলল, ভাবী আপনি একটু হাসপাতালে আসেন তো....। ওরা না, অনেক কষ্ট দিয়ে মারসে, সামনে থেকে গুলি করসে।’
এদিকে শাহীনের মৃত্যুর ঘটনায় আজ দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। আরএমপি কমিশনার মো. শামসুদ্দীন বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে শিবিরের ক্যাডার নুরুল ইসলাম ওরফে তাতী শাহীনকে আটক করে আমাদের ডিবি পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে আটটি ওয়ারেন্ট অব অ্যারস্ট মুলতবি ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া এবং মতিহার থানায় আরো ১৩টি মামলা আছে। বিভিন্ন সময়ে পুলিশের ওপর যে আক্রমণগুলো হয় সেই আক্রমণে তিনি নেতৃত্ব দিতেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে মতিহার থানার ওসিকে মারধর করার ঘটনায় তাঁর প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব ছিল। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর তিনি এই ঘটনাগুলো স্বীকারও করেন এবং তাঁর সহযোগী কারা আছে এদেরকে ধরিয়ে দেবেন এমন আশ্বাস দেন। পুলিশ গভীর রাতে তাঁকে নিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশে রওনা হয়। এর সাথে মতিহার থানা পুলিশও একত্রিত হয়। দুটি টিম একসাথে যাওয়ার পথে নলখোলা আশরাফের মোড় এলাকায় পৌঁছালে তাঁর সহযোগীরা...ওত পেতে থাকা সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় পুলিশ গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে বিভিন্ন পজিশনে গিয়ে পাল্টা গুলি করে। চার-পাঁচ মিনিট গুলি বিনিময়ের পর তাঁর সহযোগীরা চলে গেলে মাঝখানে গাড়ি থেমে নেমে পালানোর সময় মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন নুরুল ইসলাম। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাঁকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
আরএমপি কমিশনার দাবি করেন, জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের ছোঁড়া ককটেলে গোলাম মোস্তফা ও মোজাফফর হোসেন নামের দুই কনস্টেবল আহত হয়েছেন। তাঁদের পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি রিভলভার, দুটি গুলি ও ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করেছেন তিনি।