নবীগঞ্জের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপ্যায়ন স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছিলেন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কৃতী সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুদ্বৈপ্যায়ন ভট্টাচার্য্য। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর এই প্রথম তাঁর নিজ জন্মস্থান নবীগঞ্জের করগাঁও ইউনিয়নের জন্তরী গ্রামে শহীদ বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপ্যায়ন স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করা হয়েছে।
আজ বুধবার বেলা ১২টা ১ মিনিটে প্রদীপ জ্বালিয়ে এর উদ্বোধন করেন অনুদ্বৈপ্যায়নের ছোট বোন প্রীতিলতা ভট্টাচার্য্য।
শহীদ বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপ্যায়ন স্মৃতি সংসদের আয়োজনে এ সময় এক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বিপদ ভুঞ্জন বাগচী। ভানু লাল দাশের পরিচালনায় শহীদ বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপ্যায়ন স্মৃতিস্তম্ভের উদ্যোক্তা ও প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট-হবিগঞ্জ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরু মিয়া, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ রিজভী আহমদ খালেদ, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলহাজ ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ গুল আহমদ কাজল, কারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নূর মিয়া, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সাইদুর রহমান ও অলিউর রহমান, মিজানুর রহমান, শাহ এমরান, যুবলীগ নেতা লেবু আহমদ জেবু, মুন্না বাগচী, রমজান আলীসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জের জন্তরী গ্রামের দিগেন্দ চন্দ্র ভট্টাচার্য্যের ছেলে অনুদ্বৈপ্যায়ন ভট্টাচার্য্য ১৯৪৫ সালের ৩১ জানুয়ারি জন্তরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা নামকরা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ছিলেন। ১৯৬৩ সালে তিনি সিলেট এমসি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে একাদশ স্থান অধিকার করে আইএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে। ১৯৬৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে বিএসসি (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। পরের বছর ফলিত পদার্থবিদ্যায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে এমএসসি পাস করেন। ১৯৬৮ সালের ১৪ মার্চ ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে ১ জুলাই জগন্নাথ হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। কলেম্বা প্রাণের বৃত্তি নিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে বিমানে ওঠার সব ব্যবস্থা চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু ভোর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে মেধাবী ছাত্র-শিক্ষকের সঙ্গে শহীদ হন তিনি।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, অনুদ্বৈপ্যায়ন ভট্টাচার্য্য শহীদ হওয়ার দুদিন আগে অর্থাৎ ২৪ মার্চ জন্তরী গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন বিদায় নেওয়ার জন্য। এ সময় আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের মানুষ তাঁর সঙ্গে ঢাকায় যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি বারণ করেন। কিন্তু সেই যাওয়াই তাঁর শেষ যাওয়া হয়।