পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম
সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দেওয়া, কাজ করতে ব্যর্থ ঠিকাদারদের পারফরমেন্স সিকিউরিটি বাজেয়াপ্ত না করা, সেচকর আদায়ে ব্যর্থতাসহ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম পেয়েছে সংসদীয় কমিটি। এসব অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৭তম বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (স্থানীয় সরকার বিভাগ), যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলোর হিসাব সম্পর্কিত মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট ২০১০-১১ এর ওপর গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উত্থাপিত অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফরিদপুর অফিসে রেসপনসিভ প্রথম সর্বনিম্ম দরদাতার দরপত্র গ্রহণ না করে চতুর্থ সর্বনিম্ম দরদাতার দর গ্রহণ ও চুক্তি সম্পাদন করা হয়। এ জন্য এক কোটি ১১ লাখ দুই হাজার ১১৪ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বিভিন্ন জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাউবোর কাজ শেষ করতে ব্যর্থ ঠিকাদারদের পারফরমেন্স সিকিউরিটি বাজেয়াপ্ত না করায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কোটি ৬১ লাখ ৮৫ টাকা ৫০০ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অনধিক তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সিএজির মাধ্যমে কমিটিকে জানানোর সুপারিশ করা হয়।
পাউবো কর্তৃক সেচকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতায় বোর্ডের চার কোটি ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৯৪ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ জন্য কমিটি অর্থ, পরিকল্পনা, কৃষি, সিএজি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় একসঙ্গে বসে সরকারের জারি করা কৃষকের কাছ থেকে সেচকর আদায়ের যৌক্তিকতা নিরূপণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসরণ না করে নদীর তীর সংরক্ষণকাজে বোল্ডার ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কারণে ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৪৫ টাকা রাজস্ব ক্ষতি, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে নির্মাণসামগ্রীর গুণগতমান নিশ্চিত না করে অর্থ পরিশোধ করার মাধ্যমে বোর্ডের ৭৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৪৫ টাকা আর্থিক অপচয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে মান নিয়ন্ত্রণ ও ডাম্পিং কমিটির উপস্থিতিতে সিসিব্লক পানিতে নিক্ষেপ না করা সত্ত্বেও ঠিকাদারকে সিসি ব্লকের মূল্য পরিশোধ করায় ৩১ লাখ ৫৫ হাজার ৬২০ টাকা অপচয়, প্রধান প্রকৌশলী অনুমোদিত খননকাজের প্রাক্কলনের মঞ্জুরির তুলনায় ঠিকাদারকে অতিরিক্ত খনন মূল্য পরিশোধ করায় মোট ২৮ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। আর সেচকর বাবদ আদায়কৃত অর্থ থেকে ভাউচারের মাধ্যমে ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৭ টাকা ব্যয় দেখিয়ে উত্থাপিত অডিট আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি বিষয়গুলো নিষ্পত্তির সুপারিশ করে।
কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শহীদ, রেবেকা মমিন, মো. শামসুল হক টুকু, মঈন উদ্দিন খান বাদল, মো. রুস্তম আলী ফরাজী ও ওয়াসিকা আয়েশা খান বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া সিঅ্যান্ডএজি মাসুদ আহমেদ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও অডিট কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।