ভৈরবে ৩ মাস পর শিশুর লাশ উত্তোলন
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ফাহিম (১০) নামের এক শিশুকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠায় আদালতের নির্দেশে দাফনের প্রায় তিন মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করেছে পুলিশ।
আজ সোমবার সকালে ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চিত্রা শিকারীর উপস্থিতিতে শিশুটির লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকার চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে কবরস্থানের আশপাশে স্থানীয় উৎসুক জনতা ভিড় জমায়।
ফাহিমের পরিবারের অভিযোগ, জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে ভৈরবের চণ্ডীবের এলাকার বাসিন্দা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ফাহিমের বাবা সায়েম মিয়ার সঙ্গে তাঁর মা ও ভাই-বোনদের বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে ফাহিমকে চলতি বছরের ৫ মে তার দাদা, কাকা ও কাকিসহ বেশ কয়েকজন মিলে বেধরক পিটিয়ে আহত করে। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২২ সেপ্টেম্বর ফাহিমের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ফাহিমের মা আসমা বেগম বাদী হয়ে গত ২৬ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁর শাশুড়ি নাজিরা খাতুনকে প্রধান আসামি করে দেবর ও জাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ভৈরব থানাকে মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলসহ লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেন।
অভিযোগ ও মামলার বিষয়টিকে পুরোপুরি বানোয়াট ও মিথ্যা উল্লেখ করে ফাহিমের দাদা আবদুর রহমান বলেন, ‘কয়েক মাস আগে ফাহিম অসুস্থ হলে প্রথমে আমরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করাই। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকার শিশু হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন ফাহিম ক্যানসারে আক্রান্ত। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় সে মারা যায়। আমরা স্বাভাবিক নিয়মে দাফন সম্পন্ন করি।’
তখন ফাহিমের মা-বাবা কোনো অভিযোগ করেননি বলে উল্লেখ করে আবদুর রহমান অভিযোগ করেন, তাঁদের পারিবারিকভাবে হয়রানি ও সামাজিকভাবে হেয় করতে এ ঘটনা সাজিয়েছেন তাঁর ছেলের বউ।
এ বিষয়ে ফাহিমের মা আসমা বেগম জানান, তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বেধরক আঘাতের কারণে ফাহিম অসুস্থ হয়। পরে ওই আঘাতের ফলে ক্যানসার আক্রান্ত হয় তাঁর ছেলে। তিনি ছেলে হত্যার ন্যায়বিচার দাবি করেন।
এদিকে প্রতিবেশী মিলন মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানায়, ফাহিমকে মারধরের কোনো ঘটনা তাঁদের জানা নেই। তবে ফাহিম ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে অনেক দিন ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে পরে মারা যায় বলে তারা জানায়।
ফাহিম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু তাহের জানান, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চিত্রা শিকারী এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশে আদিষ্ট হয়ে পুলিশ তাঁর উপস্থিতিতে শিশু ফাহিমের লাশ উত্তোলন করে এবং প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।