দেশি মাছ রক্ষায় সম্মিলিত কাজের বিকল্প নেই : প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/06/15/praannismpdmntrii_chbi_0.jpg)
হাওর অঞ্চলে দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে হাওর অঞ্চলে দেশি প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি একথা জানান। মৎস্য অধিদপ্তর এ কর্মশালা আয়োজন করে।
এ সময় প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে দেশি প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করতে না পারলে সামগ্রিকভাবে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। হাওরের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় জনপ্রতিনিধি, মৎস্যজীবী প্রতিনিধি, মৎস্য চাষী, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্মিলিতভাবে কাজ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘দেশের মানুষের সামগ্রিক স্বার্থে হাওর অঞ্চলে দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষাসহ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের সব মানুষের জন্য যেটা প্রয়োজন ও অনিবার্য সে মাছ যত্নের সঙ্গে বেড়ে উঠার সুযোগ দিতে হবে। এজন্য হাওরে দেশি মাছ রক্ষায় নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। মৎস্য খামারিদের পোনা মাছের প্রতি, ছোট মাছের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। বেপরোয়াভাবে পোনা মাছ ধরা যাবে না। মাছ বেড়ে ওঠার জন্য অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে হবে। প্রজনন মৌসুমে মা মাছ নিধন করা যাবে না। হাওড়ে এমন কোনো নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করা যাবে না, যে জাল দিয়ে পোনা মাছ নিধন হয়। অপরদিকে হাওরে কোন বিষাক্ত রাসায়নিক বা কীটনাশক যাতে ব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে দেশি প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। মৎস্যসম্পদ রক্ষায় জনগণকে বোঝাতে হবে, সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। সরকার দেশে মৎস্য আইন যুগপোযোগী করেছে। মৎস্য আইনের পরিপন্থী কাজ যে করবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’
মন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, ‘ভাতে মাছে বাঙালির ঐতিহ্য এক সময় প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। একটা সময় বলা হতো মাছের আকাল। এমনকি, ইলিশ মাছও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত নির্দেশনা ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ইলিশের উৎপাদন সব রেকর্ড অতিক্রম করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ইলিশ জিআই সনদ পেয়েছে।’
‘সারা বিশ্বের মোট ইলিশের প্রায় ৮০ ভাগ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়’ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশি ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের অব্যাহত প্রচেষ্টায় ৩৯ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশি মাছ যাতে বিলুপ্ত না হয় সেজন্য ময়মনসিংহে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে। যে অঞ্চলে কোনো মাছ বিলুপ্ত হবে, লাইভ জিন ব্যাংক থেকে সে অঞ্চলে মাছের পোনা সরবরাহ করা হবে। যাতে সে অঞ্চলে নতুন করে দেশি মাছের বিস্তার হতে পারে।’
কর্মশালায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকারিয়া এবং সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক এম এ জলিল। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক অলক কুমার সাহা।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ্, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় মৎস্যজীবী ও মৎস্য খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।