চেয়ারম্যানের দখলে ভূমিহীনের খাসজমি : হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা
চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ২১৩ নং ঈশানবালা মৌজার ৬৬ একর কৃষি খাস জমিতে ছয় মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্ট। আজ বুধবার (২১ জুন) বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতের রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বিভূতি তরফদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
আইনজীবী জানান, ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল নীলকমল ইউনিয়নের ২১৩ নং ঈশানবালা মৌজার ৮১ একর কৃষি খাস জমি ৮১ জন স্থানীয় ভূমিহীনকে বন্দোবস্ত দেন। ২০১৬ সালের ২০ জুন পর্যন্ত ৯৯ বছরের জন্য এ বন্দোবস্ত দেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)।
বন্দোবস্তের শর্তে বলা আছে, চাষাবাদ ছাড়া আর কোনো উদ্দেশে এই জমি ব্যবহার করতে পারবে না। তবে কারো বাড়িঘর না থাকলে লিখিত অনুমতি নিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ করতে পারবে। কোনো অবস্থাতেই বন্দোবস্তের জমি বর্গা দেওয়া যাবে না। শর্ত অনুযায়ী বন্দোবস্ত পাওয়া ব্যক্তিরা খাজনাও পরিশোধ করে আসছিলেন।
কিন্তু গত ১৯ মার্চ নীলকমল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আবদুল মালেক হাইমচর উপজেলার সহকারী কমিশনারের কাছে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন দাখিল করেন। সে প্রতিবেদনে তিনি ২১৩ নং ইশানবালা মৌজার ৭৪ একর জমি নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সউদ আল নাছের ও তার ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনসহ মোট ৭৪ জনের দখলে দেখান।
ফসলের বার্ষিক ক্ষতিপূরণ বাবদ এই ৭৪ জন ৩০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আবেদন করলে সরেজমিন তদন্ত করে এ প্রতিবেদন দেন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আবদুল মালেক। গত জানুয়ারিতে এই প্রতিবেদনটি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন বন্দোবস্ত পাওয়া মো. মামুন মিয়া, মো. স্বপন মোল্লাসহ ৬৮ জন ভূমিহীন।
সরকারি কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার যোগ্যতা সংক্রান্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালের ৮৫ ধারা তুলে ধরে রিটে বলা হয়, নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা ভূমিহীন কৃষক নন। ফলে উল্লেখিত ধারা অনুসারে এই জমি বছর মেয়াদে বন্দোবস্ত পাওয়ার যোগ্য নন। তাছাড়া স্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়া ব্যক্তিরা বন্দোবস্তের সব শর্তই পূরণ করে আসছেন।
আজ ওই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর রুলসহ আদেশ দেন উচ্চ আদালত। স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া ২১৩ নং মৌজার জমি বছর ভিত্তিতে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালের ৮৫ ধারা লঙ্ঘন করে নীলকমল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বন্দোবস্ত দেওয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। ভূমি সচিব, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), হাইমচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আইনজীবী আইনজীবী বিভূতি তরফদার বলেন, আদালত ২১৩ নং ইশানবালা মৌজার ৬৮ একর জমিতে ছয় মসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। এ আদেশের ফলে এখন আর এই জমির শ্রেণি-প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না।