ভারতীয় মহিষের মাংস ছাড়ের নির্দেশনা চেয়ে রিট
ভারত থেকে আমদানি করার পর হিলি স্থলবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের জব্দ করা এক টন মহিষের মাংস ও ২৫ টন পেঁয়াজের চালান ছাড়ের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
আজ সোমবার (২৬ জুন) হাইকোর্টে মেডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক মো. এনামুল হক মিলন এ রিট দায়ের করেন।
অর্থ সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান, কাস্টমস কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাফসান আলভী বলেন, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশন মূলত এটাই হলো সেই সিন্ডিকেট তারা চায় না, ভারত থেকে কোনো ধরনের মাংস বাংলাদেশে আসুক। তারা আইন দেখায় এটা বাণিজ্যিক খাতে নিষিদ্ধ। কিন্তু শিল্পখাতে এটা আমদানি করতে পারবেন। এতে বিডার পারমিশন রয়েছে। এটা নিয়ে দুটো আইনও আছে। সেটা হলো আমদানি নীতি আদেশের ২০ নম্বর ধারায় ক্লোজ-ক ও খ অনুযায়ী আমদানিতে কোনো বাধা দিতে পারবেন না। ক্লোজ-ক তে বলা হয়েছে, ‘যেসব পণ্যের বাণিজ্যিক আমদানি নিষিদ্ধ এবং যাহাদের আমদানি, একমাত্র শিল্প খাতের জন্য বৈধ, সে সকল পণ্য নিয়মিত ভিত্তিতে অনুমোদিত শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়মিত স্বত্ব অনুসারে আমদানি স্বত্বের সর্বাধিক ৩ (তিন) গুণ পর্যন্ত আমদানি করা যাবে।’
আইনজীবী রাফসান আলভী বলেন, আজ রিট আবেদনটির প্রাথমিক শুনানি হয়েছে। আদালত আমাদের নিয়মিত কাস্টম আপিল ফাইল করতে বলেছেন। যার শুনানি হবে আগামী ৫ জুলাই। আদালতে রিটের পক্ষে সিনিয়র হিসেবে শুনানি করেছেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
এর আগে গত ৬ জুন ভারত থেকে আমদানি করা এক টন মহিষের মাংস ও ২৫ টন পেঁয়াজ ছাড়ের জন্য হিলি স্থলবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে। আবেদনে সাড়া না পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মাংসের চাটনি তৈরি করে দুবাইয়ে রপ্তানির জন্য ভারত থেকে এক টন মহিষের মাংস আমদানি করেছিল মেডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ১০ মে হিলি স্থলবন্দরে ওই মাংস এলেও এখনো ছাড় দেয়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। মাংসের চালান ছাড় না দিতে কাস্টমসকে চিঠি দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তাদের যুক্তি, বিদেশ থেকে মাংস আমদানি করতে হলে আগে থেকে তাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেডলাইফ বলছে, শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য মাংস আমদানির ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়ার দরকার হয় না। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, সাভারের ভাকুর্তায় কারখানা রয়েছে মেডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজের। তারা ১ টন মহিষ ও ২৫ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছিল। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আপত্তির কারণে ওই মাংস এখন কাস্টমসের তত্ত্বাবধানে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি সংরক্ষণাগারে রয়েছে। আর পেঁয়াজ পড়ে আছে হিলি বন্দরের গুদামে। এভাবে আমদানি করা মাংস আটকে দেওয়ার সমালোচনা করেছেন এই ব্যবসা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, আগে মহিষের মাংস আমদানি করে বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে বেশ কম দামে বিক্রি করতেন। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি বিধান করার পর তারা মাংস আমদানি করতে পারছেন না। কারণ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কাউকেই অনুমতি দিচ্ছে না। দাম বাড়ার কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে মাংস কেনা কঠিন হয়েছে, তা স্বীকার করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, গরু, খাসি ও মহিষের মাংসের বাড়তি দামের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তা ছাড়া একটা শ্রেণি সিন্ডিকেটও করে রেখেছে। সে কারণে দাম আরও বেড়েছে।
তারা আরও বলেন, বাজারে ভারসাম্য আনতে হলে অবাধে আমদানি না করে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মাংস আমদানি করতে দেওয়া উচিত। তাহলে যারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন, সেটা ভেঙে যাবে। দেশের চাষিরাও ক্ষতির শিকার হবেন না। কিছু মাংস এলে দাম কিছুটা কমে ন্যায্য পর্যায়ে আসবে।