জামায়াতের মামলায় আসামি যুব ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা!
মোংলায় বাকবিতণ্ডার মত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নয় নেতাকর্মীর উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে উল্টো তাদের নামেই মামলা দিয়েছেন জামায়াতের এক কর্মী। মামলার আসামিরা সকলেই মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শুক্রবার (৭ জুলাই) উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের সোনাইলতলা এলাকায় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে জামায়াত-বিএনপির লোকজন একই এলাকার যুব ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। এতে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নয় নেতাকর্মী রক্তাক্ত জখম হন। আহত নয় জনের মধ্যে চার জনকে ঘটনার দিন রাতেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিরা মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী জামায়াত-বিএনপির হামলার শিকার স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা আহত মো. মারুফ শেখ এবং অপর মামলার বাদী হলেন হামলাকারী জামায়াতকর্মী মো. সাইফুল্লাহ মল্লিক। স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা মারুফের মামলার আসামি হয়েও জামায়াতকর্মী সাইফুল্লাহ কীভাবে থানায় গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করলেন এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের এমন ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
জামায়াতকর্মী সাইফুল্লাহ মল্লিকের করা মামলায় আসামিরা হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা কমিটির সদস্য মারুফ শেখ, উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়ন ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী শেখ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুন শেখ, ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ফিরোজ শেখ, জাকির আলী শেখ, মোজাহিদ মোল্লা, ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য তোতা শেখ, টিটু শেখ ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য জিলানি কাজী।
উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার হুমায়ুন কবির বলেন, এলাকার তালিকাভুক্ত রাজাকার মৃত হাসেম আলী মল্লিকের ছেলে জামায়াতকর্মী সাইফুল্লাহ মল্লিক, আরেক তালিকাভুক্ত রাজাকার মজিবর সরদারের ছেলে আজিজ মল্লিক ও তার ছেলে বিএনপিকর্মী আব্দুল্লাহ মল্লিক এবং মৃত হাসেম মল্লিকের ছেলে হাবি মল্লিক ওরফে ডাকাত হাবির হামলার শিকার হয়ে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ জন ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চার জন চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপির লোকজনের হামলায় আমার দলের নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ওই সব জামায়াত- বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে এখন পর্যন্ত পুলিশ আসামিদের কাউকে আটক করেননি।‘
জামায়াত-বিএনপির হামলার শিকার মামলার বাদী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা মারুফ শেখ বলেন, ‘সাবেক শিবিরনেতা ও বর্তমান জামায়াতকর্মী সাইফুল্লাহসহ তার সহযোগী জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা আমাদের উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করেছে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও পুলিশ কেউকে আটক করছে না। উল্টো আমার মামলার আসামি সাইফুল্লাহ থানায় গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা করেছে। আমার মামলার আসামি হওয়ার পরও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার না করে আমাদের বিরুদ্ধে তার মামলা নিয়েছে। এতে আমরা হতবাক হয়েছি, আমাদের লোকজন হাসপাতালে আর সাইফুল্লাহসহ তার কেউ হাসপাতালে ভর্তিও হয়নি, তাহলে পুলিশ মামলা নিল কীভাবে?’
মোংলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দীন বলেন, ‘সাইফুল্লাহ মল্লিক জামায়াতকর্মী কি না, সেটা আমার নলেজে নেই। এ ছাড়া মামলা দুটি পরপর হওয়ায় ‘কে’ আসামি তা জানারও সুযোগ ছিল না। তবে দুটি মামলারই আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’