সৌদিতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত দুজনের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম
সৌদি আরবের আল হাসা শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় একটি ফার্নিচার কারখানায় আগুনে নয় বাংলাদেশি প্রবাসী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজনের বাড়ি নওগাঁতে। জেলাটির বাসিন্দা সেই নিহত দুজন হলেন, আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া গ্রামের মৃত আজিজার প্রামাণিকের ছেলে রমজান আলী (৩৩) এবং একই উপজেলার বিশা ইউনিয়নের উদয়পুর মন্ডলপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে বারেক সরদার (৪৫)।
দীর্ঘদিন ধরে সৌদিতে থাকা এই দুই প্রবাসীর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা উপজেলায়। কান্না থামছে না নিহতদের স্বজনদের। উর্পাজনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে চিন্তায় পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। দ্রুত মরদেহ দেশে এনে দাফনসহ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনেরা।
নিহতদের পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে পাঁচ বছর আগে ঋণ করে সৌদিতে পাড়ি জমান রমজান আলী। অন্যদিকে, ২০০৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে যান বারেক সরদার। তাঁরা দুজনেই ওই ফার্নিচার কারখানায় কর্মরত ছিলেন। শুক্রবার বিকেলের দিকে ওই কারখানায় আকস্মিক আগুন লাগে। কাঠের কারণে দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করে আগুন। এতে কারখানাটির ভেতর আটকা পড়ে রমজান আলী ও আব্দুল বারেক সরদারসহ দশ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে নয়জনই বাংলাদেশি।
আজ শনিবার সকালে নিহতদের মৃত্যুর খবর পৌঁছে নওগাঁয়। খবর পাওয়ার পর থেকে নিহতদের বাড়িতে চলতে থাকে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। প্রতিবেশীরা তাদের সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
নিহত রমজান আলীর মা রহিমা বেওয়া বলেন, ‘ছয় মাসের ছুটি কাটিয়ে চার মাস আগে ছেলে সৌদি গেছিল। দুদিন আগেও ভিডিও কলে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। ছেলের ব্যস্ততার কারণে আর কথা বলা হয়নি। ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। এখন লাশটা এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।’
নিহত বারেক সরদারের ভাতিজা নাহিদ সরদার বলেন, ‘চাচার মৃত্যুর খবর ছোট দুই চাচা নিশ্চিত করেছেন। খবরটি শোনার পর থেকেই তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ভেঙে পড়েছে। এখন মরদেহ দেশে আনাটাই কষ্টকর। চাচার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। খরচ করে মরদেহ আনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে তাদের। সরকারি সহায়তা পেলে চাচার লাশটি শেষ বারের মতো তার স্ত্রী-সন্তানরা দেখতে পেত।’
বারেক সরদারের বড় ভাই শাহাদত হোসেন বলেন, ‘পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল বারেক। তার মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ল। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়েটির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিয়তার মুখে। ভাইয়ের লাশ শেষবারের মতো দেখতে পাবো কি না সেটা জানি না।’
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গাজিউর রহমান বলেন, ‘সৌদি আরবের ফার্নিচার কারখানায় অগ্নিকান্ডে নিহতদের মধ্যে নওগাঁর দুজনের তথ্য আমরা পেয়েছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করা হচ্ছে। সৌদি দূতাবাসে আমার বন্ধু কর্মরত আছে। ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে মরদেহ দুটি ফিরিয়ে আনতে নিহতের স্বজনদের সহযোগিতা করব। আর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো রকম সহযোগিতা করার সুযোগ থাকলে সব ধরনের সহযোগিতা তাদের করা হবে।’