ভোলায় জেলেদের জালে নেই কাঙ্ক্ষিত ইলিশ
ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া এবং সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। যা ধরা পড়ছে, তা আকারে খুবই ছোট। ফলে তেলের দাম ও ট্রলারের খরচ মিটিয়ে ভাগিদারদের নিয়ে পুষিয়ে নিতে না পারায় হতাশ মাঝিমাল্লারা।
জেলেদের অভিযোগ ভারতীয় জেলেরা অবৈধ জালে ছোট-বড় সব ধরনের ইলিশ ধরে নেয়। অপরদিকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাকে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সব কিছুর পরও আশার বাণী শোনাচ্ছেন মৎস্য অধিদপ্তর।
ভোলার সবচেয়ে বড় মাছঘাট হচ্ছে চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজঘাট। এই মাছঘাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাকডাকে মনে হচ্ছে নদী ও সাগড়ে প্রচুর রুপালি ইলিশ ধরা পরার কারনে জমে উঠেছে মাছঘাট গুলোর বেচাকেনা। তবে বাস্তবে এর চিত্র উল্টো। জেলার সবচেয়ে বড় মাছঘাট চরফ্যাশনের সামরাজ ঘাটে ইলিশের মৌসুমে কোটি কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হতো প্রতিদিন। যা এখন সব মিলিয়ে কয়েক লাখ টাকার ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে। মন্দের ভালো হচ্ছে গত তিন-চার দিন আগেও ছিল ইলিশ শূন্য। সেই তুলনায় কিছুটা হলেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ। তবে ধার-দেনা, এনজিওর লোন আর সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে হতাশা জেলেদের মধ্যে।
জেলে ইউসুফ, তাজুলসহ অনেকেই জানান তাঁদের ক্ষোভের কথা। তাঁদের মতে এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। তাই যে পরিমাণ ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ার কথা তাঁর অর্ধেকও ধরা পড়ছে না। যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে তাতে তাঁদের দিন চলছে না। খরচ মিটিয়ে ভাগিরা পাচ্ছেন না কিছু। তার ওপর এনজিওগুলোর রক্তচক্ষু তো রয়েছেই। রয়েছে তেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ভারতীয় জেলেদের ট্রলিংবোর্ডে ছোট-বড় ইলিশ ধরে নেওয়ার অভিযোগ। সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা খরচ করে সাগরে গিয়ে যা পাচ্ছেন তাতে হতাশ জেলেরা। তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ কত দিন থাকবে?
এদিকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নিয়ে রয়েছে জেলেসহ ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ। তাঁদের অভিযোগ ওই সময় বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশ ধরেছে ভারতীয় জেলেরা। এ নিয়ে ক্ষোভ আড়তমালিক সমিতিরও।
চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ মাছঘাট আড়তমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, সরকারকে ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাটা দিতে হবে। একই সঙ্গে ইলিশ রপ্তানি সহজতর করার পাশাপাশি ভারতীয় জেলেরা যাতে ইলিশ ধরে নিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এদিকে আশার বাণী শোনালেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ। তাঁর মতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ রয়েছে মেঘনা নদীতে।
ডিম আসতে দেরি আর জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ী করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, এ কারণেই জেলেরা ইলিশ পাচ্ছে না। ছোট আকারে যা পাচ্ছে তা মূলত পুরুষ ইলিশ। পেটে ডিম এলে তখনই মা ইলিশগুলো মেঘনায় প্রবেশ করবে আর তখনই জেলেদের জালে ধরা পড়বে। এক লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন ইলিশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।