পানিতে তলিয়ে যাওয়া সেই শিশুটি বেঁচে আছে, ভালো আছে
বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে ছিল রাস্তা। তাতে ডুবে গিয়েছিল সাত মাসের শিশু হোসাইন। পায়ের সামান্য অংশ দেখা যাচ্ছিল তার। সেই পা ধরে শিশুটিকে টেনে তোলেন এক ব্যক্তি। যখন হোসাইনকে পানি থেকে তোলা হচ্ছিল, তখন অনেককে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়তে শোনা যায়। কাঁদছিলেন অনেকে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কেউ একজন বলছিলেন, ‘আল্লাহ, কার মায়ের বুক যেন খালি হয়ে গেছে।’ এমন একটি ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এরপর শুরু হয় আমাদের অনুসন্ধান। জানা যায়, শিশুটি তখনও বেঁচে ছিল। আর আজ বিকেলে জানা গেল, অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শিশুটি এখন শুধু বেঁচে নয়, ভালো আছে। যদিও বাঁচানো যায়নি শিশু হোসাইনের বাবা-মা ও বোনকে।
ঘটনাটি ঘটে গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে। ঝুমবৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক তখন ডুবে ছিল। মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির সামনের রাস্তা বাদ ছিল না। জানা যায়, সেখানে বিদ্যুতের তার পড়ে। এতে আশপাশের কিছু অংশ বিদ্যুতায়িত হয়। পরে বিদ্যুতের সংস্পর্শে এসে একই পরিবারের তিনজনসহ মারা যায় চারজন।
নিহতরা হলো—সাত মাস বয়সী শিশু হোসাইনের বাবা মিজান (৩০), তার মা মুক্তা বেগম (২৫) ও বোন লিমা (৭)। তাদের উদ্ধারে গিয়ে মারা যান অনিক নামের এক রিকশাচালক।
আজ শনিবার বিকেলে এনটিভি অনলাইনের এ প্রতিবেদক কথা বলেন মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিনের সঙ্গে। ওসি বলেন, ‘পানিতে ডুবে যাওয়া হোসাইন নামের ওই শিশুটি বেঁচে গেছে। সে এখন শিশুটি ভালো আছে। তবে, তার বাবা-মা এবং বোন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে।’
সকালে শিশু হোসাইনকে নিয়ে মিরপুর মডেল থানায় যান আমেনা বেগম নামে এক নারী। সেখানে তিনি শিশু হোসাইনের বেঁচে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা করেন গণমাধ্যমে।
আমেনা বেগম বলেন, ‘হোসাইনের মা যখন পানিতে পড়ে যায়, তখন হোসাইন মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে। এ সময় অনিক এসে হোসাইনকে পানি থেকে তুলে শিশুটিকে আমার কোলে দেয়। পরে আমি তাকে আমার বাসায় নিয়ে প্রথমে শরীরে গরম তেল মালিশ করি। এরপর তাকে নিয়ে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখান থেকে ডাক্তার শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। রাতে তাকে সেখানে নিয়ে যাই। চিকিৎসার পর সকালে ডাক্তার বলেন, হোসাইন এখন সুস্থ। তাকে বাসায় নিয়ে যান। পরে আমি জানতে পারি, হোসাইনের দাদা ও নানা মিরপুর মডেল থানায় আছেন। তাই এখানে এসেছি।’
গতকাল রাতের ঘটনার পর ওই এলাকার বাসিন্দা মাহমুদ রাকিব ঘটনাস্থলে যান। আজ বিকেলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঘটনার পর একটু বৃষ্টি থামলে আমিসহ আরও দুজন সেখানে যাই। গিয়ে দেখি, মানুষ আর মানুষ। কিন্তু, ততক্ষণে সবাইকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নেওয়া হয়। আজ দুপুরে শুনি, ভাইরাল হওয়া শিশুটি বেঁচে আছে। শুনে ভালো লাগল। আল্লাহ যেন হাতে করে বাঁচিয়েছেন শিশুটিকে।’