অক্টোবর সরকারের পতনের মাস হবে : শামসুজ্জামান দুদু
আসন্ন অক্টোবরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের পতন হবে বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, ‘আন্দোলন এখনও কিছুই দেখেননি। সেপ্টেম্বরের পরে অক্টোবরই হবে সরকারের পতন, স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মাস। অক্টোবরে এই সরকারের সঙ্গে দেনা-পাওনার সব কিছু মীমাংসা হবে।’
আজ শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ এবং বিএনপিনেতাদের মুক্তির দাবিতে এক প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন দুদু। এ সভা আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলন’।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমাদের দেশের ৫২ বছর বয়স হয়েছে। এই ৫২ বছর বয়সে আমাদের অর্জন আমেরিকার স্যাংশন ও ভিসা নীতি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় থাকা অবস্থায় গতকাল (শুক্রবার) ভিসা নীতির কার্যক্রম চালু করেছে। কেন করেছে? কারণ বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, ভোটার অধিকার নেই, মানবাধিকার নেই। আর এই কারণে আমেরিকা আগে স্যাংশন দিয়েছিল, এখন ভিসা নীতি কার্যক্রম শুরু করেছে।’
এই বিএনপিনেতা আরও বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে, সরকারি দলের দায়িত্বশীল অনেক নেতা, প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা ও সচিব পর্যায়ের অনেকেই এই ভিসা নীতির আওতায় পড়েছেন। কেন বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিতে আসবে? এটা কোনো আনন্দের সংবাদ নয়।’
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘যে দেশ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছে, সেই দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, স্বাধীনতা নেই।’
সরকারের উদ্দেশে ছাত্রদলের এই সাবেক সভাপতি বলেন, ‘আপনারা এই দেশ থেকে লাখ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। যারা আমেরিকায় টাকা পাঠিয়েছেন, বাড়ি কিনেছেন তারা সেগুলো ভোগ করতে পারবেন না।’
সরকারের উদ্দেশে শাসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, ‘আপনারা যে অন্যায় করেছেন, তাতে আমেরিকা-ইউরোপ আপনাদের ওপর কী করল, সেটা বড় বিষয় নয়। কিন্তু, আমাদের লজ্জা হয়। আপনারা প্রশাসনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যে অপকর্ম করেছেন, বিশ্বের কাছে আমাদের অপমানজনক অবস্থায় ফেলেছেন। এটা কি আপনারা বুঝতে পারছেন?’
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের যে চুক্তি—রাষ্ট্রকে মানুষ কর দেয়, কিন্তু রাষ্ট্র এখন দানবে রূপান্তরিত হয়েছে। এ সরকার দেশের জনগণকে দেখে না। তারা মানুষের সঙ্গে দানবের মতো আচরণ করছে। বর্তমান সরকার যত তাড়াতাড়ি পদত্যাগ করবে, তাদের জন্য, দেশের জন্য, মানুষের জন্য তত তাড়াতাড়ি ভালো হবে। এই সরকারের পদত্যাগ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।’
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গিয়েছেন এক থেকে তিন দিনের, কিন্তু শোনা যাচ্ছে সেখানে তিনি পুরো মাসই থাকবেন। কীসের জন্য থাকবেন? কেন থাকবেন? এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে বলা হয়নি, সরকার থেকেও বলা হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘দেশের মানুষ চায়, আপনি পদত্যাগ করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেন। দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ হোক। আর যদি পদত্যাগ না করেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ বাধ্য করবে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে। চারদিকের অবস্থা ভালো না। যেখানেই বিএনপি সভা-সমাবেশ ডাকে, সেখানেই লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়।’
সংগঠনের আহ্বায়ক এম জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোফাজ্জল হোসেন হৃদয়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির তথ্য বিষয়ক সহসম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মো. ইউনুছ আলী, তাঁতি দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ডাক্তার কাজী মনিরুজ্জামান মনির, কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আব্দুল্লাহ আল বাকী, সাধারণ সহসম্পাদক শেখ রবিউল ইসলাম রবি, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচেও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুসা ফরাজী, ইউসুফ আলী মিঠু, যুব জাগপার সভাপতি মীর আমির হোসেন আমু, ওবায়দুর রহমান, শফিকুল ইসলাম সবুজ ও মোক্তার আখন্দসহ আরও অনেকে।