শহুরে বৃষ্টি বিলাসী মন, আশা-নিরাশার এক চিত্র!
চারদিকে তখন মুষলধারে ঝরছে বৃষ্টি। এরই মধ্যে লাল-সাদা শাড়ি পরিহিত তরুণী হাঁটছেন। পায়ে জুতা নেই, আছে তার হাতে। ভিজতে ভিজতে সড়কে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বাসস্ট্যান্ডে দুপুরে এ দৃশ্য দেখে ‘মেট্রোরেল ছাতা’র নিচে দাঁড়িয়ে কেউ একজন বলে ওঠেন, ‘বৃষ্টি বিলাসী মন।’ বিষয়টি অনেকটা তেমনই। শহুরে পরিবেশে কখনও কখনও এমন বৃষ্টি বিলাসী হতে দেখা যায় অনেককে। যদিও এই বৃষ্টি সবার জন্য সুখকর, তা কিন্তু নয়। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো আছেন কষ্টে।
এর আগে রাজধানীর কাঁঠালবাগানের ফ্রি স্কুল স্ট্রিট সড়কে দেখা যায়, একদল কিশোর ও যুবক ফুটবল খেলায় মেতেছে। পাশে দাঁড়িয়ে আরও দুই শিশু খেলা দেখছিল। আরেকটু সামনে এগিয়ে দেখা গেল, পলিথিনে পানি ভরে তা আবার ফেলছিল তিন শিশু। এভাবে তারাও খেলায় মেতেছিল।
এ প্রতিবেদক যখন সে পথ ধরে আসছিলেন। সে সময় একটি চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে এক তরুণ মুফোঠোনে কাকে যেন বলছিলেন, ‘খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে। রান্না করে খাওয়াও।’ পরে ওই তরুণ কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘প্রেমিকাকে ফোন করে খিচুড়ি রান্না করতে বললাম। এই বৃষ্টির মধ্যে প্রেমিকার হাতের খিচুড়ি রান্না! দারুণ হবে।’
আকাশ চৌধুরী। বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বিকেলে যাবেন রাজধানীর উত্তরায়। কারণ, তার প্রেয়সী তাকে বৃষ্টিতে ভেজার দাওয়া দিয়েছেন। আকাশ চৌধারী বলছিলেন, ‘বিকেলে প্রেমিকা বৃষ্টিতে ভেজার দাওয়াত দিয়েছে। মুখ্য উদ্দেশ্যে ভেজা। সঙ্গে প্রেমিকার ঠোঁটে গরম চায়ের আবেশ দেখা।’ যদিও তিনি জানেন না, বিকেলে বৃষ্টি থাকবে কি না। তারপরও আয়োজন তাদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীতে বৃষ্টির শুরু। বৃহস্পতিবার কিছু সময়ের জন্য সূয্যিমামা উঁকি দিয়ে চলে যায়। পরে আর তার দেখা মেলেনি। তারপর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি। আর এ বৃষ্টিতে যেন পুরো শহর ‘বৃষ্টি বিলাসী’ হয়ে উঠেছে। তবে, সে বৃষ্টি সবার কাছে যে স্বস্তির, তা কিন্তু নয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রিকশাস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন নজরুল আলম নামের এক বৃদ্ধ। তিনি রিকশাচালক। রিকশাস্ট্যান্ডের পাশে দিয়ে যাওয়া মানুষের কাছে তিনি জানতে চাচ্ছিলেন, ‘যাবেন বাবা?’ মানে, যাত্রী হিসেবে তার রিকশায় কেউ উঠবেন কি না তা জানতে চাচ্ছিলেন। এ প্রতিবেদককে নজরুল বলছিলেন, ‘বৃষ্টির মধ্যে লোকজন কম। আয় নেই তেমন। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে, বাবা। বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম।’
যদিও এর ভিন্ন চিত্রও রয়েছে। কাঁঠালবাগান বাজার থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ভাড়া হওয়ার কথা খুব বেশি হলে ৩০ টাকা। কিন্তু, বৃষ্টি দোহায় দিয়ে এক রিকশাচালক ৫০ টাকা ভাড়া নিলেন হৃদয় নামের এক যুবকের কাছ থেকে। হৃদয় বললেন, ‘বৃষ্টির সময় অধিকাংশ সময় ভাড়া বেশি দেওয়া লাগে।’