তিস্তাপারে নতুন সম্ভাবনা
প্রতি বছরই কয়েক দফায় রংপুর অঞ্চলে তিস্তার নদীর পানি উপচে বন্যা দেখা হয়। মূলত, উজানের ঢলের পানির কারণেই প্লাবিত হয় অঞ্চলটি। তিস্তাপারের মানুষ এ ঢলের সঙ্গে পরিচিত হলেও এবার ঘটেছে ব্যতিক্রম। অন্যসময়, স্বচ্ছ পানি এলেও এবার এসেছে ঘোলা পানি, যা গত কয়েক দশকে দেখেনি অঞ্চলটির মানুষেরা। এতে এবারের বন্যায় অনেক ফসলি জমি যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তেমনি অনেকে একে দেখছেন আশীর্বাদ হিসেবে।
ভারতের অঙ্গরাজ্য সিকিমের পাহাড়ি অঞ্চলে এবার ভারী বর্ষণ ও হিমবাহ গলা পানির কারণে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ ভেঙে তাণ্ডব শুরু করে তিস্তা। অসংখ্য স্থাপনার সঙ্গে পানির চাপে সেখানে ধসে যায় বেশকিছু পাহাড়। আর সৃষ্ট হওয়া ঢলে সেখানকার অনেক কিছু ভাসিয়ে নিয়ে আসে বাংলাদেশে।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের ওই বন্যার পর থেকেই আসছে সেই পানি। এই কাঁদাপানিতে এবার লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার তিস্তা তীরবর্তী চরে অনেক ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় কাঁদা বা পলিমাটিতে ঢেকে গেছে আগাম জাতের পাকা ধানসহ উঠতি আমনক্ষেত।
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা জানান, বন্যার পানির সঙ্গে পলিমাটি এসেছ। এতে আবাদ আগের তুলনায় ভালো হবে। আগে যে পানি সেচ দেওয়া লাগত, পলির কারণে এখন তা কম দেওয়া লাগবে। তবে, বন্যার পানির সঙ্গে কাদায় বা ডুবে থেকে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
পানি নেমে যাওয়ার পর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এতে প্রতিদিনই নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে উঠতি আমনক্ষেত। ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে অনেকেই আধাপাকা ধান কেটে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সাম্প্রতিক বন্যায় লালমনিরহাটে আমনসহ ১১৪ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এদিকে কাঁদামাটি লেগে থাকা ফসলের গাছে পানি ছিটিয়ে পরিস্কার করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্যতা যাচাই করে পরামর্শ দেব। সেখনে সেচ সুবিধা ও ফিতা পাইপ ব্যবহার বাড়ানোসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’