নাইকো দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য দিলেন দুই কানাডিয়ান পুলিশ
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে হওয়া নাইকো দুর্নীতি মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন কানাডার দুই পুলিশ কর্মকর্তা। আজ সোমবার (৩০ অক্টোবর) কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের লয়েড শোয়েপ ও কেবিন দুগ্গান সাক্ষ্য দেন।
এদের মধ্যে লয়েড শোয়েপের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে, কেবিন দুগ্গানের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি। এর জেরে আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দিন ধার্য করেছেন।
লয়েড শোয়েপ সাক্ষীতে বলেন, কানাডার তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি নাইকো একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। এর কাজ পেতে ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়ার মধ্যে অর্থের লেনদেন হয়।
কানাডার এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নাইকোতে তৎকালীন সরকারের কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতি করতে ইন্ধন জোগায়। আমরা এ দুর্নীতির বিষয়ে জানতে পারি গণমাধ্যমের নিউজ দেখে। নাইকোর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার দায়ে নাইকো রিসোর্সেস কানাডায় দুর্নীতির দায়ে সাজপ্রাপ্তও হয়েছেন।
আজ সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে আদালতে উপস্থিত হন এই দুই সাক্ষী। সাড়ে ১১টার দিকে লয়েড শোয়েপ সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণ মূলতবি চেয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সময় আবেদন করেন। আদালত তা নামঞ্জুর করেন। পরে কিছুটা সময় সাক্ষ্যগ্রহণ মূলতবি করে বিরতিতে যান আদালত। এরপর কেবিন দুগ্গান সাক্ষ্য দেন। তবে, তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি।
এর আগে শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাতে আলোচিত এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে ঢাকায় আসেন কানাডা রয়েল পুলিশের দুই সদস্য। রোববার তারা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে ১৯ অক্টোবর তাদের সাক্ষ্য দিতে সমন জারি করেন ঢাকার বিশেষ আদালত।
২০০৭ সালে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেছিলেন। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদক আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
এরা হলেন—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। এদের মধ্যে এ কে এম মোশাররফ হোসেন ২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গত বছরের ১৬ মার্চ মারা গেছেন।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সরকারে থাকাকালে খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন ক্ষমতা অপব্যবহার করে কানাডার কোম্পানিটিকে অবৈধভাবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সুবিধা পাইয়ে দেয়। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
আসামিদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন কারাগারে, বাকি ছয়জন জামিনে এবং আরেক আসামি কাশেম শরীফ পলাতক রয়েছেন।