জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের শুনানি পেছাল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নিয়ে চলা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটির মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদনের শুনানি পিছিয়েছে। শুনানির জন্য আগামী ১২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আজ সোমবার (৬ নভেম্বর) এ আদেশ দেন।
এ সময় রিটকারীর আইনজীবী সভাসমাবেশ নিষিদ্ধের কনটেম্পট মামলার শুনানির আগে নিষ্পত্তি চাইলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যেহেতু এটা মূল মামলা থেকে এসেছে কাজেই আগে আপিল শুনানি নিষ্পত্তি করতে হবে।’
গত ২৬ জুন জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে চলা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটির মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর পক্ষে এ আবেদন করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। এ ছাড়া আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সমাবেশ করে রেজিস্ট্রেশন দাবি করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে পৃথক আরেকটি আবেদন করেন মাওলানা রেজাউল হক চাঁদপুরী। এটিও দাখিল করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
এই আবেদনের পর ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেছিলেন, আমরা দুটি আবেদন করেছি। একটা হচ্ছে হাইকোর্টের রায় বলবৎ থাকার পরও ১০ বছর পরে জামায়াত কর্মসূচি পালন করেছে। আমরা জামায়াতের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়েছি। আরেকটি আদালত অবমাননার। কারণ তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে, যেখানে আদালত অবমাননার বিষয় আছে। অথচ, হাইকোর্টের রায়ে তাদের নিবন্ধন অবৈধ।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। এর পরের বছরই বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। সে রুলটি যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। তবে, এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতে ইসলামী আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করলে ওই বছর ৫ আগস্ট তা খারিজ হয়।
পরে ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। সে আপিলে পক্ষভুক্ত হয়ে জামায়াতের নিবন্ধনের পক্ষে গত ১ আগস্ট আবেদন করেন ৪৭ ব্যক্তি। হাইকোর্টের রায়ের পর ওই সময় বিএনপির জোটের শরিক দল জামায়াতের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দশম, একাদশ সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেনি দলটি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০১৭ সালের মার্চে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট জারি করে নির্বাচন কমিশন।