আশুলিয়ায় আজও বন্ধ পোশাক কারখানা, আরেকজন গ্রেপ্তার
অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষের মুখে আশুলিয়ায় আজ রোববারও (১২ নভেম্বর) বন্ধ রয়েছে তৈরি পোশাক কারখানা। বিভিন্ন কারখানার ফটকে ঝুলছে অনির্দিষ্টকাল বন্ধের নোটিশ। সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় কারাখানা মালিকদের মামলায় আরও এক শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মজুরি বোর্ড ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা প্রত্যাখ্যান করে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে গোটা শিল্পাঞ্চলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। শিল্পাঞ্চলজুড়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের নিরবচ্ছিন্ন টহল অব্যাহত রয়েছে।
আজ রোববার ভোর থেকেই বিভিন্ন পোশাক কারখানার সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্যকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সকাল থেকে টঙ্গী-আশুলিয়া সড়কের ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর ও জিরাবো-বিশমাইল সড়কের কাঠগড়া আমতলা, বড় রাঙ্গামাটিয়ার বিভিন্ন কারখানা সামনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় কারখানা মালিকদের করা মামলায় আসামিদের ধরতে মাঠে রয়েছে পুলিশ। আজ রোববার আরও এক শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মালিকপক্ষ পাঁচটি মামলা করেছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন বহু শ্রমিক। তবে পুলিশ বলেছে, নিরীহ শ্রমিকদের আতঙ্কে থাকার কারণ নেই। যারা কারখানায় ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন, কেবল তারাই আইনের আওতায় আসবেন।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই আইনে বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা বেতন পাবেন না। যদিও এর আগে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
বিজিএমইএ’র জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘যতদিন পরিস্থিতি শান্ত না হবে, ততদিন প্রয়োজনে কারখানা বন্ধের পাশাপাশি নিয়োগও বন্ধ থাকবে।’
বিজিএমইএ’র এমন সিদ্ধান্তে মোটা দাগে বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরাই। কারণ কারখানা বন্ধ মানে বেতনও বন্ধ।
এ বিষয়ে এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘কারখানা খোলা রেখে দেখা গেছে, শ্রমিকরা হাজিরা দিয়েই আবার আন্দোলনে নেমেছেন। যে কারণে আমাদের এই সিদ্ধান্ত।’
জামগড়ায় কারখানায় বিক্ষিপ্তভাবে ঘোরাঘুরি করতে থাকা একাধিক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধের পাশাপাশি বেতন না দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, তা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন দমাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এভাবে কারখানা ও বেতন বন্ধ রেখে পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তারা।
রোববার ভোর থেকেই মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিতে দেখা গেছে, পুলিশের এপিসি ও জলকামানের বিশেষ সাজোঁয়া যান।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনের মুখে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলে পোশাক কারখানা ভাঙচুরের অভিযোগে পাঁচ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচ জনকে। জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বাকি জড়িতদেরও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’