আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর সরকার৷ জেনেভায় আজ সোমবার (১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে, বিশ্বাসযোগ্যভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে, এজন্য তাদের যথেষ্ট ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে৷’ একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিকে অসাংবিধানিক।

সংবিধানের বাধ্যবাধকতার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সব রাজনৈতিক দলকে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের অনুমোদন দিচ্ছে দাবি করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখছি, বিএনপির কর্মীরা সহিংসতা ছড়াচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমকর্মী, নিরপরাধ মানুষ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্কুলকে সহিংস হামলার লক্ষ্য বানিয়েছে৷’ রাজনৈতিক উদ্দেশপ্রণোদিত না হয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আটক করছে বলেও জানান তিনি।

সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) চতুর্থ পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ এর আগে সবশেষ এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের মে মাসে৷ 

তৃতীয় সেই পর্যালোচনায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মোট ১৭৮ সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছিল উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, এর সবগুলো বাস্তবায়নে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে৷

বাংলাদেশের বিরোধী দলের ওপর রাজনৈতিক দমন পীড়নের অভিযোগ থাকলেও বর্তমান সরকারের অধীনে বরং তারা বেশি সুযোগ পাচ্ছে বলে আনিসুল হক দাবি করেন৷ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিরোধীদলগুলোর রাজনৈতিক সুযোগের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে৷ সংসদে বিরোধী দলগুলো সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে৷ আগের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিপরীতে সংসদীয় কমিটিতে কয়েকটি সভাপতির পদ বিরোধীদের দেওয়া হয়েছে৷ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বিরোধী সংসদ সদস্যদের মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়৷’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেকোনো মানবাধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি৷’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ড করে থাকলে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে দাবি করেন আনিসুল হক৷ তিনি জানান, ২০১৫ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে এক হাজার ৬৯২টি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে৷ আট হাজার ৪৮৮ জন পুলিশের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে৷ নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২৪টি মামলা হয়েছে৷ তিনি দাবি করেন, সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ‘বাংলাদেশে পূর্ণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে৷’

গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার অনলাইন ও অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিয়েছে৷ বর্তমানে দেশে ৩৯টি টিভি চ্যানেল, ৫৭৬টি সংবাদপত্র ও ১৮২টা অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে৷ দুই হাজার ৩২৮টি স্থানীয় এনজিও ও ২৬৭টি বিদেশি এনজিও কোনো ধরনের বাধা বা সেন্সরশিপ ছাড়া কাজ করতে পারছে বলেও দাবি করেন তিনি৷

বাংলাদেশ ইউপিআরের সুপারিশগুলো নিয়মিতভাবে ফলোআপ করে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘সরকার জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস মেকানিজমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷’ তিনি আরও বলেন, ‘সামনের দিনে আন্তর্জাতিক অন্য বাধ্যবাধকতাগুলোতে প্রবেশের আগে বাংলাদেশের জাতীয় প্রাতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের মনযোগী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।’

এ ছাড়া শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ আইএলও কনভেনশন বাস্তবায়ন করছে বলে জানান আইনমন্ত্রী৷ ন্যূনতম মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ঘটনাকে সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার নাশকতা হিসেবে দেখছে বলেও জানান তিনি৷ এক্ষেত্রে সরকার শ্রমিকদের রক্ষা ও অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ায় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান তিনি৷

মন্ত্রী বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমরা সবশেষ ইউপিআরের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছি৷ তারপরও সবসময়ই উন্নতির সুযোগ থাকে৷’