বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন
বরিশালে সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাদের হামলার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত সোমবার দিনগত রাতে সদর উপজেলার সাহেবের হাট এলাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রাবাসে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ছাত্রলীগ নামধারীরা বড় বড় ধারালো দা আর লাঠি নিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনায় ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর তিনজন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহতদের অভিযোগ, ঘটনার দিন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন করতে ক্যাম্পাসে যান বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম। সেই অনুষ্ঠানে সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল ছাত্রলীগ নামধারী সাকিব ভুইয়ার নেতৃত্বাধীন আশরাফুল, আনাস, মাহীন, তাসিন, হিমো, রাকিব, তানভীর, সিফাতসহ নিজেদের পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী অনুসারী দাবি করা ক্যাম্পাসের ১৫ থেকে ২০ জন। অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় তারা রাতে আবাসিক হলে ঢুকে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে শিক্ষার্থীদের আহত করে।
হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া সাকিব অবশ্য এই অভিযোগ স্বীকার করেননি। নিজেকে ছাত্রলীগনেতা দাবি করা সাকিব জানান, ক্যাম্পাসে স্থাপিত ম্যুরাল ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় জামায়াত-বিএনপির সমর্থকরা। বাধা দিতে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তাদের। এতে কয়েকজন সামান্য ব্যথা পেয়েছে।
তবে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি সোটা নিয়ে হলে প্রবেশ করছে হামলাকারীরা। হলের ভেতরে ঢুকে আবাসিক শিক্ষার্থীদের বেধরক মারধর ও কুপিয়ে জখম করছে তারা। প্রায় ১০ মিনিটব্যাপী তাণ্ডব শেষে নির্বিঘ্নে চলে যায় তারা।
সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ের পড়ার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না, তা জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর মুকুল বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের একটি চিঠি দিয়ে দোষীদের শাস্তি এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোড়দারের অনুরোধ করেছে। তবে তারা কোনো মামলা কিংবা নির্দিষ্ট করে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেয়নি। বিবদমান দুই পক্ষের কাছ থেকেও কোনো অভিযোগ পাইনি। যে কারণে এই ঘটনায় আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।’
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খলিল উদ্দিন বলেন, ‘আইনগত বিষয়গুলো তো তারা (থানা পুলিশ) ভালো জানে। আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি। সেখানে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এখন তারা কীভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে সেটা তাদের ব্যাপার।’
সিসিটিভি ফুটেজের ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেব আমরা।’
প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ওঠা এই হামলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিমের ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।