গাজীপুরে ট্রেনে নাশকতার অভিযোগে থানায় মামলা
গাজীপুরের শ্রীপুরে বনখড়িয়া এলাকায় ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহত ও নাশকতার অভিযোগে রেলওয়ের কমলাপুর থানায় মামলা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়।
এদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ভয়াবহ এ ট্রেন দুর্ঘটনার প্রায় ২৬ ঘণ্টা পর আজ সকাল থেকে ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে দুর্ঘটনায় রেললাইনের পাশে ছিটকে পড়া ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগিগুলো বিকেল পর্যন্ত উদ্ধারে কাজ করে রেলওয়ের উদ্ধারকর্মীরা।
রেলওয়ের কমলাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস আহমেদ বিশ্বাস আজ সন্ধ্যায় জানান, নাশকতার জন্য গত মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময়ে দুষ্কৃতকারীরা গাজীপুরের ভাওয়াল স্টেশন ও রাজেন্দ্রপুর স্টেশনের মধ্যবর্তী বনখড়িয়া এলাকার চিলাই নদীর উপর নির্মিত চিলাই ব্রিজের প্রায় ১০০ ফুট উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের পূর্ব পাশের প্রায় ২০ ফুট রেললাইন গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে উপড়ে ফেলে। গতকাল বুধবার ভোরে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন ওই এলাকা অতিক্রমের সময় ইঞ্জিন ও ছয়টি বগি (কোচ) রেললাইন থেকে ছিটকে নিচে পড়ে এবং রেললাইন দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ইঞ্জিন ও বগি ছয়টির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় এক ব্যবসায়ী নিহত এবং ট্রেনচালক ও তার সহকারী চালকসহ অন্তত ১৩ জন আহত হন। এ ঘটনায় নাশকতার অভিযোগে আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কমলাপুর থানায় মামলা করেন রেলওয়ের পিডব্লিউডি শাখার আশরাফ হোসেন। মামলায় আসামি হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ ব্যাপারে আইনগত প্রক্রিয়া ও তদন্ত চলছে।
ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত শেষে প্রায় ২৬ ঘণ্টা পর আজ সকালে ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর রেলপথে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু করেছে।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনের মাস্টার মো. হানিফ আলী জানান, গত মঙ্গলবার দিনগত রাতের কোনো এক সময় দুষ্কৃতকারীরা নাশকতার জন্য ভাওয়াল ও রাজেন্দ্রপুর স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায় প্রায় ২০ ফুট রেললাইন গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে উপড়ে ফেলে। গতকাল ভোরে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন ও ছয়টি বগি (কোচ) রেললাইন থেকে ছিটকে নিচে পড়ে। ইঞ্জিনটি বগি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে লাইনের পাশের জমিতে এবং পরের ছয়টি বগি রেললাইনের ঢালে কাত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় প্রায় ৬০০ ফুট রেললাইন দুমড়ে-মুচড়ে যায় ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পর ওই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
মো. হানিফ আলী আরও জানান, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ প্রায় ১৪ ঘণ্টা চেষ্টার পর গতকাল বুধবার রাতে ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী করে তুলে। রেলপথ মেরামত ও পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে দুর্ঘটনার প্রায় ২৬ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে ভাওয়াল এক্সপ্রেস ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশে জয়দেবপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। ট্রেনটি ওই পথের মেরামত করা অংশ নিরাপদে অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছে। এরপর ময়মনসিংহ থেকে জামালপুর কমিউটার ট্রেন ও যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন মেরামত করা অংশ নিরাপদে অতিক্রম করে ঢাকায় পৌঁছে।
মো. হানিফ আলী আরও জানান, বর্তমানে ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর রেললাইনে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে দুর্ঘটনায় রেললাইনের পাশে ছিটকে পড়া ইঞ্জিন ও বগিগুলো বিকেল পর্যন্ত উদ্ধারের কাজ করে রেলওয়ের উদ্ধারকর্মীরা।
রেলওয়ের শ্রীপুর স্টেশন মাস্টার শামীমা ইসলাম জানান, আজ সকালে দুর্ঘটনাস্থল হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু করেছে। ঢাকা থেকে ভাওয়াল এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে, বলাকা কমিউটার ৭টা ৫ মিনিটে এবং দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেন ৮টা ১২ মিনিটে দুর্ঘটনাস্থল হয়ে ময়মনসিংহের উদ্দেশে শ্রীপুর স্টেশন ত্যাগ করে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি
ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরমধ্যে একটি রেল মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে ঢাকা ডিভিশনের পক্ষ থেকে একটি টেকনিক্যাল তদন্ত কমিটি এবং অপরটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সকাল ১০টার দিকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রেল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শাহ ইমাম আলী রেজার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তাঁরা রেলওয়ের কর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রেল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শাহ ইমাম আলী রেজা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সকাল বেলা এসেছি সরেজমিন দেখার জন্য। আমরা দেখছি এবং আমরা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো দেখব এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন জমা দিব। ইতোমধ্যে ট্রেনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। এসব বিষয় নিয়ে আমরা আরও কথা বলব ও তথ্যাদি সংগ্রহ করব।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসন থেকে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরকে প্রধান করা হয়েছে। পাঁচ সদস্যের এ তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, এটা দুর্ঘটনা নয়, নাশকতামূলক কাজ। যারা দুষ্কৃতকারী, যারা অবরোধকে সমর্থন দিচ্ছে- তারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমি মনে করি দুষ্কৃতকারীরা যে কাজটি করেছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। দেশের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান। আমাদের টিম ও গোয়েন্দারা কাজ করছে। আশাকরি অল্প সময়ের মধ্যেই এদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।