ভৈরবে মুমূর্ষু রোগীদের পাশে ‘রক্তসৈনিক’
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের স্বেচ্ছাসেবী রক্তদান সংগঠন ‘রক্তসৈনিক’ দুই যুগ ধরে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ত দিয়ে কুড়িয়ে নিচ্ছে ভালোবাসা। ২০০০ সালের দিকে নজরুল ইসলাম আর সামসুল হক বাদল নামে দুই তরুণ রক্ত নিয়ে কাজ শুরু করেন।
প্রথম বেশ কয়েক বছর সাংগঠনিক কোনো ভিত্তি ছাড়াই তাঁরা রক্ত নিয়ে কাজ করেন। এরপর সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম চালান তাঁরা।
সামসুল হক বাদল জানান, তাঁরা প্রথমে পাড়া-মহল্লা, স্কুল-কলেজে গিয়ে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় বিষয়ে সচেতন করেন। এরপর শুরু করেন স্বেচ্ছায় রক্তদাতা খুঁজে বের করে তাদের তালিকা করা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানে মানুষকে উৎসাহিত করা। আর এই কাজ করতে গিয়ে তারা অনেক অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখিও হয়েছেন বহুবার। কিন্তু তাতে দমে যাননি তাঁরা।
২০১৭ সাল পর্যন্ত তাঁদের ঝুলিতে কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবীসহ সাড়ে তিন লাখের মতো রক্তদাতার তালিকা জমা হয়। সেই বছরই তারা ‘রক্তসৈনিক’ নাম দিয়ে সাংগঠনিকভাবে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তাদের সংগঠনের প্রায় ১৫ হাজার রক্তদাতা ভৈরবসহ সারা দেশে নিয়মিত রক্ত দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাদের এখন ‘রক্তসৈনিক’ নামেই ডাকে এলাকার লোকজন।
নজরুল জানান, শুধু ভৈরবেই প্রতি মাসে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার ব্যাগ রক্ত তারা স্বেচ্ছায় দিয়ে থাকেন।
ভৈরবে ৩০টিরও বেশি বেসরকারি আর দুটি সরকারি হাসপাতাল আছে। এখানে প্রতিদিন সিজারিয়ানসহ নানান অপারেশনে রক্তের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় রাত-বিরাতে রক্তদাতাদের পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে ভৈরবে একটি ব্লাডব্যাংক থাকলে রক্তদাতাদের রক্ত সংগ্রহ করে রাখা যেত। এতে যেকোনো সময় গ্রহীতারা রেডি ব্লাড পেতেন। অতিদ্রুত সরকারি উদ্যোগে একটি ব্লাডব্যাংক স্থাপনের দাবি তাদের।
রক্তসৈনিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রত্যেকেই নিয়মিত রক্ত দিয়ে থাকেন। রক্তসৈনিক কাউছার, সুমন রহমান, মোমেনা, দোলন ও ফুরকান জানান, নিয়মিত চার মাস পরপর রক্ত দিয়ে থাকেন তাঁরা। তাঁরা অপেক্ষায় থাকেন, কখন তার ডাক পড়বে। রক্ত দিয়ে আত্মতৃপ্তি পাবেন।
ভৈরবের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল জানান, তাঁর এক নিকটাত্মীয়র ব্লাডক্যানসার হলে তিনি রক্তসৈনিক সংগঠনের নজরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এক দিন পরপর এক ব্যাগ করে মোট ৫০ ব্যাগ রক্ত ম্যানেজ করে দেন। রক্তসৈনিকের এই ঋণ তিনি কোনো দিন শোধ করতে পারবেন না বলেও জানান।
প্রয়োজনীয় রক্ত সহায়তা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চণ্ডীবের গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও কমলপুর গ্রামের আপন মিয়া। তাঁরা তাঁদের ভাই ও স্ত্রীর জন্য রক্ত পান রক্তসৈনিকদের সহায়তায়।
রক্তসৈনিক ভৈরবের স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য ভূমিকা রাখছে বলে জানান বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. আমিন উদ্দিন ও ডা. এ বি সিদ্দিক। তাঁরা জানান, সময় মতো ফ্রেস রক্ত দিয়ে রক্তসৈনিকের সদস্যরা যে উপকার করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁরা রক্তসৈনিকের সাফল্য কামনা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মেদ জানান, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যখনই রক্তের প্রয়োজন হয়, খবর পেলেই ছুটে আসেন রক্তসৈনিকের স্বেচ্ছাসেবীরা। ভৈরবের চাহিদা ও রক্তদাতাদের তৎপরতা বিবেচনায় নিয়ে তিনি এখানে একটি ব্লাডব্যাংক স্থাপনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।