নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হবে : সেলিম ওসমান

তীব্র গ্যাস সংকটে হুমকির মুখে নারায়ণগঞ্জের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা। বেশ কয়েকদিন ধরে গ্যাস সংকটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আবাসিক গৃহস্থলী ও সিএনজি স্টেশনগুলোতেও। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএর সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান।
গ্যাস সংকট নিরসনে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রধান কার্যালয়ে শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাতে জরুরি সভা করা হয়। সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, নির্বাচনের পর থেকেই গ্যাস না পাওয়ার কারণে সময়মতো পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। ফলে এয়ার শিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে। এ কারণে খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, ‘বহুবার চেষ্টা করেও গ্যাসের সমস্যা দূর করতে পারছি না। ইতোমধ্যে বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাসের কারণে যথাসময়ে অর্ডার সম্পন্ন করা হয়নি। পেমেন্ট না পাওয়ার কারণে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগতে হচ্ছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় ইতোমধ্যে তিন লাখ শ্রমিক বিপদগ্রস্ত হচ্ছে।’ গ্যাস না পাওয়া গেলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই বলেও জানানো হয়।
গত বেশ কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের বৃহৎ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা। গ্যাস সংকটের কারণে বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত পোশাক শিল্প মালিকরা বেশ কিছুদিন ধরে সংগঠনের প্রধানের কাছে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন ইস্ট কোস্ট নীটওয়্যার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাত হোসেন ভুঁইয়ার সাজনু, ফতুল্লা অ্যাপারেলসের মোহাম্মদ ফজলে শামীম এহেসান, রিজি গ্রুপের পরিচালক মির্জা আকবর আলী চৌধুরী ও ফতুল্লার ডাইংকের পরিচালক মিনহাজুল হকসহ অন্যান্য শিল্প কারখানার মালিকরা।
শিল্প কারখানার মালিকরা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ, কাপড় ডাইং করা যাচ্ছে না, সময়মতো পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। তার ফলে উৎপাদন খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি ইয়ার শিপমেন্ট করার কারণে হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারছেন না বলে জানান।
নারায়ণগঞ্জে বিকেএমইএর প্রধান কার্যালয়ে জরুরি সভায় সংগঠনটির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, ‘বহুবার চেষ্টা করার পরেও গ্যাস সংকট নিরসন করা যায়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রায় তিন লাখ শ্রমিক বিপদগ্রস্ত হয়েছে। শ্রমিকদের ডিসেম্বর মাসের বেতন দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু রপ্তানি করা যায়নি, যথাসময়ে পোশাক তৈরি করা যায়নি। এখন আবার জানুয়ারি মাসের বেতন দেওয়ার সময় চলে এসেছে। এখন ডিসেম্বরের বেতন দেওয়া হবে। নভেম্বরের বেতন এখন পর্যন্ত করা হয়নি। গ্যাস সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো অচল। অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন এখনও বাড়ানো হয়নি।’
বিকেএমইএর সভাপতি বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস থাকবে, এমন আশ্বাসে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। তারপরেও গ্যাস না পাওয়ার কারণে সবাই হতাশ। বারবার যোগাযোগ করার পরেও নির্বাচনের আগে ১০ থেকে ১২ দিন গ্যাস থাকলেও নির্বাচনের সাত দিন আগে গ্যাসের প্রেসার শূন্যতে নেমে আসে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।’
সেলিম ওসমান বলেন, ‘রেশনিকভাবে নারায়ণগঞ্জে গ্যাস দেওয়ার কথা থাকলেও তা-ও দেওয়া হচ্ছে না। অতি দ্রুত গ্যাস সংকট নিরসন করে নীট শিল্পকে উন্নয়ন করার জন্য এখনই সময়, তা না হলে করোনার থেকে ২০০০ গুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
সেলিম ওসমান বলেন, ‘এই জরুরি সভা থেকে সম্মিলিতভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করা হবে। এই সমস্যার থেকে উদ্ধার করে খুব দ্রুত সময় নারায়ণগঞ্জের শিল্প অঞ্চলগুলোতে গ্যাস যেন দেওয়া হয়, তার জন্য সর্বোচ্চ মহলে আবেদন করা হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাস যদি পাওয়া যায় ভালো, অন্যথায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় থাকবে না। সে ক্ষেত্রে আমরা দায়ী হব না। যদি দাম দিয়ে গ্যাস না পাওয়া যায়, তাহলে কীভাবে শ্রমিকের বেতন বহন করা যায়। এ নিটওয়্যার শিল্প থেকে প্রতি মাসে বাংলাদেশে আড়াইহাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা আয় করে এই নিটওয়্যার শিল্প। এর মাধ্যমে ফরেন কারেন্সি, অর্থাৎ বিদেশি মুদ্রা অর্জন করা হয়, যা রিজার্ভের বড় একটি অংশ।’
গত ১৬ অক্টোবর থেকে গ্যাসের কোনো প্রবাহ নেই। গ্যাসের প্রেসার জিরো পিএসআই থাকায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে গ্যাসনির্ভর কারখানাগুলোতে। এমন দৃশ্য নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্প নগরী, ফতুল্লার কাঠের পোল, জালকুড়ি, রুপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার শিল্প এলাকাগুলোতে।
এদিকে, গ্যাস সরবরাহ না থাকায় দুরবস্থা পার করছে সিএনজি স্টেশন ও আবাসিক এলাকা। ভূইয়ারবাগ, মাসদাইর, ইসদের, খানপুর, জালকুড়ি, সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস না থাকায় মাটির চুলা দিয়ে রান্নার কাজ করছেন গৃহিণীরা।