১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
প্রতি বছরের মতো এবারও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে মাসব্যাপী দেশের বৃহত্তম বইমেলা ঐতিহাসিক ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪’ শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় এবারের বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় মেলার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’
এবার মেলায় ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৮৯৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮৬টি সাধারণ স্টল এবং ১০৯টি স্টল লিটল ম্যাগাজিন চত্বরকে দেওয়া হবে বলে জানান মুজাহিদুল।
তা ছাড়া এ বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে। গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর মেলার পুরো কাজ বাংলা একাডেমি একাই করছে উল্লেখ করে মুজাহিদুল বলেন, ‘আগের বছরগুলোতে মেলা আয়োজনে কিছু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি জড়িত ছিল, যা নিয়ে গত বছর কিছুটা সমালোচনা হয়েছিল।’
মেলার প্রস্তুতি পর্ব, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী মেলা পরিচালনার জন্য তিন ধাপে পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী সেমিনারের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য ছবি আঁকা, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকবে। আয়োজকরা জানান, ২৩ জানুয়ারি ডিজিটালাইজড লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে পুরনো ও নতুন তালিকাভুক্ত প্রকাশনার জন্য স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে।
মুজাহিদুল বলেন, ‘বিগত বছরের মতো এবারও মেলার মূল মঞ্চ হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে তৈরি করা হবে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও লেখক বলছি মঞ্চ। রমনা কালী মন্দিরের পাশে সাধুসঙ্গ এলাকায় শিশু চত্বর স্থাপন করা হবে।’
বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এ বছর ১১টি বিভাগে ১৬ জনকে কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ অথবা গবেষণা, অনুবাদ, নাটক, শিশুসাহিত্য বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু, পরিবেশ ও বিজ্ঞান ক্ষেত্র, জীবনী ও লোককাহিনী ইত্যাদি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব পুরস্কার তুলে দেবেন।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন—শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (যৌথভাবে কথাসাহিত্য), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ ও গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশু সাহিত্য), আফরোজা পারভিন এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা), পক্ষীবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ ও বিজ্ঞান ক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোককথা)।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতি ও বইমেলা এলাকায় মেট্রোরেল পরিচালনার ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় মেলার নিখুঁত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিগত বছরের মতো সব ব্যবস্থা নিয়েছে। ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রধান চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে—জঙ্গিবাদ, অগ্নিসংযোগ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। মেট্রোরেলে দুর্বৃত্তরা নাশকতা চালানোর চেষ্টা করছে, এমনটি লক্ষ্য করায় মেট্রোরেল পরিষেবা একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। তবে বইমেলার মাঠের ভিতরে ও বাইরে ডিএমপি ইউনিফর্ম এবং সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে এবং মেলার আশেপাশের সবকিছু পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ওয়াচ টাওয়ার ও ফায়ার টেন্ডার স্থাপন করা হবে।
এ ছাড়া মেলার মাঠ এবং এর আশপাশ সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোন দিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। নিরাপত্তা রক্ষায় ডিএমপির একাধিক টিম কাজ করবে এবং গুজব ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নজরদারি করা হবে।