ক্ষমতায় থাকতে বারবার দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে আওয়ামী লীগ : গয়েশ্বর
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান উত্তেজনা এবং এর ফলে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় সৃষ্ট পরিস্থিতির নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘শুধু ক্ষমতায় থাকতে বারবার দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি এমন অসহনীয় থাকলে দেশের অর্থনৈতিক, কূটনীতিকসহ সব খাতে বিপর্যয় হবে। এর দায় সরকারকে নিতে হবে। মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া নতুন কোনো ষড়যন্ত্র কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
আজ বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গয়েশ্বর।
বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে সরে এসেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আন্দোলনের গতিবিধি এক থাকে না। বিভিন্ন সময় আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হয়। বিএনপির আন্দোলন চলমান আছে, আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি শিগগিরই আরও স্পষ্ট হবে।’
নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সরকারই বাহিরের শক্তিকে নিয়ে কোনো পরিস্থিতি তৈরি করছে কি না, এমন প্রশ্ন তোলেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে জাতির সঙ্গে সহিংস প্রতারণা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকার এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। কারচুপির নির্বাচন প্রমাণ করেছে ব্যর্থ ও অন্তঃসারশূন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতি। মানুষ ভোট বর্জন করে বিএনপির আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে, গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। এটি বিএনপির রাজনৈতিক সফলতা। মানুষের কাছে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশবাসী বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে এটা উপলব্ধি করি।’
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘বিএনপির সব কর্মসূচিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতার ফসল। বানরের পিঠা ভাগের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির সিনিয়র নেতাসহ হাজারো কর্মী এখন কারাগারে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি মোকাবিলা করছে সহিংস-সশস্ত্র সরকারকে। প্রতিদিন পুলিশি নির্বাচন ও বিচার বিভাগের অবিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিএনপিকে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন মধ্যযুগের বর্বরতাকে হার মানাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া করেছে। গণ-অভ্যুত্থানে পরাজয়ের ভয়ে বিএনপির ওপর হামলা, নির্যাতন করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে মরিয়া সরকার। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় হতো। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব সরকারকেই আরও মারমুখী করেছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, অসম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত সরকার।’
মঈন খান বলেন, ‘গণতন্ত্র রক্ষায় চলমান আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। ক্ষমতার উৎস দেশের মানুষ, আওয়ামী লীগ বিদেশি শক্তিতে টিকে আছে। আন্দোলন অব্যাহত থাকলে ফ্যাসিবাদের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
সরকার মেগাপ্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ করে ড. মঈন খান বলেন, ‘সরকারের ব্যর্থতায় বৈদেশিক ঋণের বোঝা বাড়ছে। উন্নয়নের নামে লুটপাটে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের নেতারা। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিয়ন্ত্রণহীন বাজার, এসবে সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই।’
এ সময় গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায় জনগণ। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করবে বিএনপি। রাজপথে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শিগগিরই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইমলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সিরাজুদ্দিন আহমেদ, আবুল খায়ের ভুইয়া, সুকোমল বড়ুয়া, তাহসিনা রুশদির লুনা, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও হারুন অর রশিদসহ অন্যরা।