সাইবার আইনের পাঁচটি ধারা সাংবাদিকদের বিপদে ফেলতে পারে : বিচারপতি হাসান আরিফ
সাইবার নিরাপত্তা আইনের পাঁচটি ধারা সাংবাদিকদের বিপদে ফেলতে পারে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ।
আজ সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ও আদালত সাংবাদিকতা’ শীর্ষক কর্মশালায় শেখ হাসান আরিফ এ কথা বলেন।
শেখ হাসান আরিফ বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের পাঁচটি ধারা সাংবাদিকদের বিপদে ফেলতে পারে। সেগুলো হলো ২১, ২৫, ২৬, ২৭ ও ২৮ নং ধারা। তন্মধ্যে ২১ নং ধারাটি সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। কেননা এ অস্পষ্ট ধারায় তথ্য জালিয়াতির কোনো সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। সরকার চাইলে যেকোনো সময় সাংবাদিকদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে। কেননা একেক সময় তথ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসেন একেক মন মানসিকতা নিয়ে। কেউ সাংবাদিক বান্ধব হন, আবার কেউ সমালোচনা একদম নিতে পারেন না। সরকারগুলো হন জিরো টলারেন্স। কেননা আমরা দেখছি, গত ১৬ বছর বা তার আগে বলতে গেলে ১৯৯১ সাল থেকে দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকারগুলো সমালোচনা নিতে পারে না। সমালোচনা হলেই সাংবাদিকরা গ্রেপ্তার, নির্যাতন মামলা হামলার শিকার হচ্ছে। তাই এসব ধারাগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।
আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, শিশুদের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে পরিচয় প্রকাশ না করা হয়।
ফোরামের সভাপতি শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের পরিচালানায় আলোচনায় অংশ নেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
কিশোর গ্যাংকে একটি সামাজিক সমস্যা উল্লেখ করে ‘সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস’এর সভাপতি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, সাম্প্রতিককালে কিশোর গ্যাং গ্রেপ্তার হচ্ছে, আমাদের সমাজে কিশোর গ্যাং আসলেই একটা সমস্যা। কিশোর গ্যাং কেন হয়, কী কারণে হয়, সমাজবিজ্ঞানীরা আছেন তারা ভালোভাবে দেখতে পারবেন কীভাবে প্রিভেন্ট করা যায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টিকোণ থেকে তারা মনে করছে এ ধরনের কিশোর গ্যাংদের গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আরও বলেন, মানুষ কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় ভীষণ অতিষ্ঠ। আমি যখন বিভিন্ন জায়গায় যাই আমাদের বলে এ কিশোর গ্যাং আসলে কেউ কিশোর না। হতে পারে সবাই কিশোর না, ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়স। আমাদের শিশু আইনে ১৮ বছর। শিশু আইন ও হাইকোর্টের রায়ে বলা আছে, শিশুদের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পরিচয় যাতে প্রকাশ না করা হয়। কিন্তু আমি কয়েকদিন ধরে দেখছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে প্রবণতা আছে কে কতটুকু কাজ করছে তা তুলে ধরার। তারা হয়তো ডাকল, ডেকে মিডিয়ায় ব্রিফ করলো। প্রাথমিকভাবে ধরে নিতে হবে এরা কিশোর। কারো যদি বয়স কম বেশি হয় সে বিষয়ে প্রশ্ন এলে সেটা আদালত নির্ধারণ করবে।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের গ্রেপ্তার হওয়া বা ধরা আইনগত বাধা নেই। এটা করতেই পারে। কিন্তু এদের ছবি দেওয়া মিডিয়ায়, পত্রিকায় সেভাবে পরিচয় প্রকাশ করা, এটা কিন্তু আইনে বারিত করছে। এখন আপনাকে (সাংবাদিকদের) ডেকে ব্রিফ করল। করলেই কী আপনি ছবিসহ নাম প্রকাশ করে দেবেন? সেক্ষেত্রে আপনাকে সংযত হয়ে আইনটা মেনে সংবাদ পরিবেশন করবেন, ছবি যাতে প্রকাশিত না হয়।
আদালত সাংবাদিকতার বিষয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, যতটুকু সত্য ততটুকু আপনি (সাংবাদিক) করবেন। ধরেন, কোনো বিচারকের চারটি ফ্ল্যাট আছে। আপনি লিখে দিলেন চারটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে কিছু কিছু সূত্র জানিয়েছে, তার আরও তিন থেকে চারটি ফ্ল্যাট আছে। ততটুকু দেবেন যতটুকু আপনি প্রমাণ করতে পারবেন। যদি আপনার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়, অবশ্যই ডিপেন্ড করবেন। আমি মনে করি এ ধরনের সাহসী সাংবাদিকতা অবশ্যই থাকা দরকার। কারণ আমরা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিচারক হই, যেই হই। আমাদের জবাবদিহিতা আছে জনগণের কাছে, আইনের কাছে, সংবিধানের কাছে। তবে সাবধানতার সঙ্গে করতে হবে, যাতে বিচারকের মানহানি না হয়।