ভুটানের রাজাকে বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/03/25/bhuttaaner_raajaake_bimaanbndre_laalgaalicaa_snbrdhnaa.jpg)
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুককে ঢাকার হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই ভুটানের রাজা ও রানি জেৎসুন পেমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
এর আগে ভুটানের রাজা ও রানিসহ তাঁদের সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিশেষ বিমানটি বিমানবন্দরে সকাল ১০টা ১১ মিনিটে পৌঁছায়। রাষ্ট্রীয় অতিথিকে অভ্যর্থনার অংশ হিসেবে রাজা বিমান থেকে নামার পর ২১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। পরে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল অতিথিকে অভিবাদন জানায়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও ভুটানের রাজা অভিনন্দন মঞ্চে নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ানোর পর দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে রাজা প্যারেড পরিদর্শন করেন।
কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন প্রেজেন্টেশন লাইনে অপেক্ষারত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে পরিচয় করিয়ে দেন। অন্যদিকে ভুটানের রাজাও তাঁর প্রতিনিধিগণকে পরিচয় করিয়ে দেন।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিবগণ, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসেছেন ভুটানের রাজা ও রানি।
মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তাঁরা। বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ ভুটান। দীর্ঘ ১১ বছর পর বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় এলেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক।
এরআগে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন রাজা ও রানি। ঢাকায় পৌঁছে রাজা প্রথমেই যান ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান তিনি। সেখান থেকে রাজা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যান।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবেন রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে স্বাগত জানাবেন। পরে দুজন কিছুক্ষণ একান্তে বৈঠক করবেন।
এরপর রাজা ও প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নেবেন। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক আলোচনা-পর্যালোচনা করা হবে। এতে বিশেষ করে ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি, বাণিজ্য, পর্যটন, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে।
বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং একটি সমঝোতা নবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে। সফরের দ্বিতীয় দিন ২৬ মার্চ ভোর সাড়ে পাঁচটায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন ভুটানের রাজা। এসময় সেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উপস্থিত থাকবেন। রাজা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন এবং সেখানে একটি বৃক্ষ রোপণ করবেন।
স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে সকাল সাড়ে ১০টায় রাজা রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যাবেন। সেখানে ভারত থেকে ফিরে এসে বাংলাদেশে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া ভুটানের রোগী কারমা দেমার সঙ্গে কথা বলবেন। ২৬ মার্চ বিকেলে রাজা ও রানি বঙ্গভবনে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত থাকবেন। পরে বঙ্গভবনে ইফতার ও নৈশভোজে অংশ নেবেন রাজা-রানিসহ অতিথিরা।
২৭ মার্চ সকালে পদ্মা সেতু পরিদর্শনে যাবেন ভুটানের রাজা। এদিন আড়াই হাজারে জাপান-বাংলাদেশের যৌথ ব্যবস্থাপনার ইপিজেড পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তাঁর। এরপর বিকেল ৪টায় ঢাকায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ভুটানের রাজা। বাংলাদেশে ভুটানের দূতাবাস এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানিয়েছে, ২৮ মার্চ ভুটানের রাজা ঢাকা ত্যাগ করবেন।